শিশু অধিকার ও টেকসই উন্নয়নে ইউনিসেফ ও আইসিসিবির যৌথ সংলাপ অনুষ্ঠিত
ঢাকা, ১২ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশে শিশু অধিকার ও টেকসই উন্নয়নে বেসরকারি খাতের ভূমিকা জোরদারে সম্প্রতি আইসিসিবি সচিবালয়ে এক বিশেষ সংলাপের আয়োজন করেছে ইউনিসেফ এবং ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি)।
বৈঠকে বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে শিশু অধিকার ও টেকসই উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় যুক্ত করার নতুন দিকনির্দেশনা ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা হয়।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান সামাজিক দায়বদ্ধতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নে আইসিসিবির দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, প্যারিস-ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি)-এর বাংলাদেশ চ্যাপ্টার হিসেবে আইসিসিবি দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনা ও নৈতিক কর্পোরেট চর্চা প্রচারে অব্যাহতভাবে কাজ করে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের জাতীয় অগ্রাধিকার এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেন যে, আইসিসিবি ইউনিসেফের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়মিতভাবে সহযোগিতা করে আসছে। ২০২২ সালে সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের সহায়তায় ইউনিসেফ বাংলাদেশের কার্যক্রমে সহযোগিতা হিসেবে আইসিসিবি ১৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে।
এছাড়া ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে আইসিসিবি ইউনিসেফ বাংলাদেশের মাধ্যমে ইউনিসেফ প্যালেস্টাইনে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার শিশুদের চিকিৎসা, খাদ্যসহ বিভিন্ন মানবিক সহায়তার জন্য ৩০.১৭৫ মিলিয়ন টাকা (২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৭০.৭৮ মার্কিন ডলার) অনুদান দিয়েছে।
ইউনিসেফের প্রাইভেট ফান্ড রেইজিং ও পার্টনারশিপস বিভাগের পরিচালক কার্লা হাদ্দাদ মারদিনি ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে একত্রিত করে যৌথ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আইসিসিবির প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি শিশুর জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে বেসরকারি খাতের পুঁজি ও উদ্ভাবনকে সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো এখন সময়ের দাবি।
আলোচনায় ইউনিসেফ প্রতিনিধিদল জোর দিয়ে বলেন, বেসরকারি খাত সামাজিক পরিবর্তনের একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি, যা কেবল আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে নয়, বরং নিজেদের প্ল্যাটফর্ম, প্রভাব ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে শিশু-অধিকার, লিঙ্গ সমতা এবং তরুণদের ক্ষমতায়নেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
সংলাপে আরও তুলে ধরা হয় যে, ইউনিসেফের ‘চিলড্রেনস রাইটস অ্যান্ড বিজনেস প্রিন্সিপলস (সিআরবিপি)’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্পোরেট নীতিমালা গ্রহণের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি, শিশুবান্ধব কর্মপরিবেশ এবং একটি বিচারভিত্তিক ও সমতাপূর্ণ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।
সভা শেষে আইসিসিবি ও ইউনিসেফ উভয় পক্ষই ভবিষ্যৎ সহযোগিতার জন্য একটি যৌথ রোডম্যাপ প্রণয়নের বিষয়ে একমত হয়। এই রোডম্যাপের মূল লক্ষ্য হবে কর্পোরেট সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি, নীতিগত সংলাপ জোরদার করা এবং শিশু ও তরুণদের কল্যাণে সম্প্রদায়-ভিত্তিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা, যা ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর স্বাক্ষরিত আইসিসি বাংলাদেশ-ইউনিসেফ সমঝোতা স্মারক (এমওইউ)-এর আওতায় পরিচালিত হবে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিসিবির সহ-সভাপতি এ. কে. আজাদ, এমসিসিআই সভাপতি কামরান টি. রহমান, ডিসিসিআই সভাপতি তাসকিন আহমেদ, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিজিএমইএ সহ-সভাপতি ব্যারিস্টার বিদ্যা অমৃত খান, প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ফজলুল হক, উত্তরা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমান, সায়হাম কটন মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ, আইসিসিবির সেক্রেটারি জেনারেল আতাউর রহমান, ইউনিসেফ জেনেভার চিফ অব কমিউনিকেশন অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি মিগুয়েল মাতেওস মুনোজ, কমিউনিকেশন স্পেশালিস্ট ক্লেয়ার ম্যাক কিভার।