নির্বাচন মানে নতুন নেতৃত্ব, নতুন আশা
\ দেলোয়ার হোসাইন আকাইদ \
কুমিল্লা, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই কুমিল্লায় বইতে শুরু করেছে নির্বাচনি উৎসবের হাওয়া। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটায় স্বস্তি ও উচ্ছ্বাসে নগর জুড়ে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ। ব্যবসায়ী, শিক্ষক, যুবসমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সবাই স্বাগত জানাচ্ছেন জাতীয় নির্বাচনের এই আনুষ্ঠানিক সূচনাকে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তফসিল ঘোষণার সাথে সাথেই কুমিল্লা নগরীর কান্দির পাড়-ধর্মসাগর পাড় এলাকায় তৈরি হয় আলাদা উত্তেজনা। দলীয় কার্যালয়ের সামনে শতাধিক মানুষ সমবেত হয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন। স্লোগানে মুহূর্তেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে পুরো পরিবেশ।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনের নেতৃত্বে তার সমর্থকরা বের করেন এক ব্যতিক্রমধর্মী আনন্দ মিছিল। সন্ধ্যার পর দলীয় কার্যালয় থেকে মিছিলটি বের হয়ে বাদুরতলা, কান্দিরপাড় হয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে।
মিছিল জুড়ে ছিলো প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনকে স্বাগত, শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বার্তা সম্মিলিত স্লোগান। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচনের দৌড় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ায় সবাই উচ্ছ্বসিত।
কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আতাউর রহমান ছুটি তফসিল ঘোষণাকে জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সময়োপযোগী সূচনা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ায় মানুষের মনে যে অনিশ্চয়তা ছিল, তা কেটে গেল। এখন সবাই প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামবে। কুমিল্লার মানুষ নির্বাচন চায়, শান্তিপূর্ণ উৎসবমুখর ভোট চায়। এই ঘোষণায় শহরজুড়ে যে উচ্ছ্বাস, তা প্রমাণ করে জনগণ কতটা অপেক্ষা করছিল।’
নগরীর কান্দিরপাড় এলাকার ব্যবসায়ী মীর মফিজুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা-বাণিজ্যে একটা অস্থিরতা ছিল। আমরা ভাবছিলাম নির্বাচনের সিদ্ধান্ত কবে হবে।
আজ তফসিল ঘোষণায় মনে হলো, অবশেষে পথটা পরিষ্কার হলো। এবার ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিকভাবে পরিকল্পনা করতে পারবে।
তিনি বলেন, নির্বাচন মানেই মানুষের ঢল, বাজারে রং, ফেস্টুন, ঝাণ্ডার চাহিদা বেড়ে যাওয়া। আমাদের মতো ব্যবসায়ী সমাজেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম বলেন, এটা শুধু রাজনীতি নয়, এটা মানুষের জীবনেও স্থিরতা আনে। তফসিল ঘোষণার পর মনে হচ্ছে শহরের বাতাস হালকা হয়ে গেছে।
সবার মুখে হাসি, দোকানে আলোচনা কবে প্রচারণা শুরু হবে? কে কোথা থেকে মনোনয়ন নেবে?
কুমিল্লা মহানগর যুবদল নেতা মশিউর রহমান সজিব বলেন, আজকের দিনটি আমাদের জন্য বিশেষ। তফসিল ঘোষণার পর তরুণদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে।
আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, সবাই যেন ভোট দিতে পারে। তরুণরা সবসময় পরিবর্তনের শক্তি। এই নির্বাচনেও তার ব্যতিক্রম হবে না।
ধর্মসাগর পাড়ে দাঁড়িয়ে তরুণ ভোটার মীর খালেদ রেজা বলেন, আমরা প্রথমবার ভোট দেব। তাই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা আমাদের কাছে উৎসবের মতো।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক আবু জাফর বলেন,‘শান্তিপূর্ণভাবে তফসিল ঘোষণা হওয়াটাই পুরো দেশকে আশাবাদী করেছে। সবাই এখন প্রস্তুত হচ্ছে উৎসবমুখর ভোটে অংশ নিতে।’
টমছম ব্রিজ এলাকার সিএনজি চালক খোকন মিয়া বলেন, ‘সারাবছরই রাজনীতির কথা শুনি, কিন্তু নির্বাচনের সময় আলাদা রং লাগে। লোকজন বেশি বের হয়, ব্যবসা ভালো হয়। এবার আশা করছি সুন্দর নির্বাচন হবে।’
কুমিল্লা সদরের ফটো প্রিন্টিং ব্যবসায়ী মো. জাহিদ বলেন, ‘এখন থেকে দিন-রাত কাজ বাড়বে। নির্বাচন আসলে প্রার্থীদের ছবি, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টারের চাহিদা আকাশ ছোঁয়া হয়।’
ধর্মসাগর পাড়ের এক প্রবীণ ব্যক্তি হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমি বহু নির্বাচন দেখেছি। কিন্তু এবার তফসিল ঘোষণা মানুষকে যেমন স্বস্তি দিয়েছে, তা আগে কম দেখেছি।
সবাই ভোট দিতে চায়, নিজের প্রতিনিধি বেছে নিতে চায়।’
তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে যেন কুমিল্লায় একটি চাপা উদ্বেগের ইতি ঘটেছে। জনমনে আবার ফিরে এসেছে স্থিতি, আশাবাদ এবং নির্বাচনি উদ্দীপনা।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী লামিশা তাবাসুম মিম বলেন,‘নির্বাচন মানে নতুন নেতৃত্ব, নতুন আশা। আমরা সবাই নিরাপদ পরিবেশে ভোট দিতে চাই ।’
নগরীর বিভিন্ন চা স্টলে, মার্কেটে, ফুটপাতে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে সব জায়গায় এখন নির্বাচনই প্রধান আলোচ্য বিষয়। পোস্টার ডিজাইনার, ব্যানার মেকার, গণসংযোগ কর্মী, বিভিন্ন সংগঠনের কর্মীরা সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রস্তুতি নিতে।
এদিকে তফসিল ঘোষণার পরপরই কুমিল্লার বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনি প্রার্থীর পক্ষে সমাবেশ, আলোচনা ও আনন্দ সমাবেশ দেখা গেছে। শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, ক্রীড়াবিদ, সমাজকর্মীদের মধ্যে সবাই নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন।