তফসিল ঘোষণায় নাটোরজুড়ে আনন্দ আর উচ্ছ্বাস
ফারাজী আহম্মদ রফিক
নাটোর, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): গণতন্ত্রের কাঙ্ক্ষিত ধারায় উত্তরণে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে কেটে গেছে অনিশ্চয়তার গুঞ্জন। আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়েছেন নাটোরবাসী। তাদের প্রত্যাশা, নির্বাচনের এই যাত্রা হবে উৎসবমুখর।
নাটোর জেলায় আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চারটি সংসদীয় আসনের ভোটার সংখ্যা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করেছে জেলা নির্বাচন অফিস। মোট ভোটার সংখ্যা ১৫ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার সাত ৭০ হাজার ৬৮৪ জন এবং মহিলা ভোটার সাত লাখ ৭৬ হাজার ৫০৪ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার সংখ্যা ১৮ জন। এছাড়া প্রবাসীসহ বিভিন্ন দপ্তরে কর্মরত এবং নির্বাচনী দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তাদের ভোট প্রদান করবেন।
নাটোর-২ আসনে (নাটোর সদর ও নলডাঙ্গা) বিএনপির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, নির্বাচন না হওয়ার অনিশ্চয়তা কেটে গেছে। তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। কারণ তারা বিগত ২০০১ সালে নির্বাচনের পর থেকে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে পারেনি এবং যায়নি। ভোটের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরবে দেশ, সংস্কার এবং উন্নয়নের গতি হবে ত্বরান্বিত।
নাটোর-৪ আসনে (বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর) জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী আব্দুল হাকিম বলেন, তফসিল ঘোষিত হওয়ায় ভোট হওয়া না হওয়ার শঙ্কা কেটে গেছে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে কমিশন সফল হবে বলে আশাবাদী।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা আমাদের জন্য সুখবর বয়ে এনেছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যে আন্দোলন ছাত্র-জনতা করেছে, এই তফসিল তারই প্রতিফলন।
জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির ড. মীর নুরুল ইসলাম নির্বাচনের তফসিল ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আর কোনো শঙ্কা নেই। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির মধ্য দিয়ে আশাকরি উৎসবমুখর পরিবেশ নির্বাচন সম্পন্ন হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নাটোর জেলা আহ্বায়ক এবং নাটোর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আব্দুল মান্নাফ বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনমুখী। তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নির্বাচন আয়োজনে আর কোনো বাঁধা নেই। আশা করি কাঙ্ক্ষিত এই নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। তবে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার জীবন হরণকারী ব্যক্তিদের প্রত্যাশিত বিচার এবং সংস্কার কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ফারাজী আসমাউল হুসনা এবারই প্রথম ভোটার হয়েছেন। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ এই ধাপে ভোট প্রদানে অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি হওয়াতে আমি উদীপ্ত হয়েছি। আমার প্রত্যাশা, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের আত্মদানকে নির্বাচিত সরকার গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় নিয়ে যেন রাষ্ট্র পরিচালনা করে।
সঙ্গীতশিল্পী ও কলেজ শিক্ষক মাসুমা সুলতানা বলেন, অনেক দিন পরে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা আইন প্রণেতা হিসেবে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দেব এবং সংস্কারের পক্ষে গণভোটে মতামত প্রদান করবো।
নাটোর নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল কুদ্দস বলেন, আশাকরি জনগণের প্রত্যাশা পূরণে নির্বাচন হবে পক্ষপাতমুক্ত, অবাধ ও নিরপেক্ষ। উৎসবমুখর হোক নির্বাচনের প্রতিটি ক্ষণ।
ভোটের ময়দানে নির্বাচনের প্রতিক্ষণ হয়ে উঠতে শুরু করেছে উৎসবমুখর। রাজনৈতিক দল ও দলের প্রার্থী এবং ভোটারদের মেলবন্ধনে রচিত হচ্ছে উৎসবের আমেজ। ক্ষণ গণনার মধ্য দিয়ে নাটোরের মানুষ তাদের ভোটের আনন্দ-উচ্ছ্বাস নিয়ে অনায়াসে পৌঁছে যাবে ফলাফলের মাহেন্দ্রক্ষণে।