শিরোনাম

\ শফিকুল ইসলাম বেবু \
কুড়িগ্রাম, ৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরাঞ্চলের জেলা কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। গত পাঁচদিন ধরে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রির নিচে অবস্থান করছে। শীতে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে বাইরে কাজে যেতে না পেয়ে খাদ্যসংকটে পড়েছেন।
আজ সোমবার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ, ফলে শীতের অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে নদীবিধৌত চরাঞ্চলে।
পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, উত্তর দিক থেকে ঠান্ডা বাতাস নামছে, সঙ্গে আছে আর্দ্রতা। পরিস্থিতি আগামী এক সপ্তাহ একই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
এদিকে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মোবাইল মেডিকেল টিম বাড়ানোর উদ্যোগ চলছে। চর এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
চিকিৎসকদের পরামর্শ, প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বের হওয়া এবং ভেজা কাপড়-চাদর ব্যবহার না করা।
জানা গেছে, কুড়িগ্রামের ৪৬৯টি চরের মধ্যে ২৬৯টিতে মানুষ বসবাস করে। এগুলোর বেশিরভাগই খোলা এলাকা, যেখানে বাঁশ, টিন দিয়ে বানানো ঘরে মানুষ থাকে। ফলে বাতাসের ঝাপটা সরাসরি ঘরে ঢুকে শরীরকে কাঁপিয়ে দেয় এসব অঞ্চলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, চিলমারী উপজেলার কড়াইবরিশাল, মনতলা, শাখাহাতি, বলবন্দিয়ার চরসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় শীতের তীব্রতার কারণে মানুষের চলাচল কমে গেছে। দিনমজুরদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। স্থবির কৃষিকাজও। এতে অনেক পরিবার খাদ্য সংকটে পড়েছে।
চিলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, এই ইউনিয়নের চারদিকে ব্রহ্মপুত্র নদী। শীতের সময় নৌকা চলে কম। মানুষের কাজ-বাজ নেই, দিনে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করা মানুষ এখন শূন্য হাতে ঘরে বসে আছে। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন তারা। জেনেছি, এই শীতে চরের মানুষ এখনো শীতবস্ত্র পায়নি।
কড়াইবরিশাল চরের হোসেন আলী বলেন, শীত এতো বেশি যে রাতে ঘুমাতে পারি না। বাচ্চারা কাঁপতে থাকে। ঘরে বাতাস ঢোকে চারদিক দিয়ে। কাজ নাই, তাই বাজারে যাওয়ার টাকাও নাই।
শাখাহাটির মালেকা খাতুন বলেন, শীতে সব কাঠ ভেজা থাকে। চুলা ঠিকমতো জ্বলে না। রান্না করতে কষ্ট হয়। বাচ্চাদের ঠিকমতো খাবারও দিতে পারছি না।
শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে মাছ ধরা কমে গেছে, কৃষকরা মাঠে যেতে পারছেন না, দিনমজুরদের কাজ নেই। ফলে আয় শূন্য। অনেক পরিবার এখন ধার-দেনায় চালাচ্ছে সংসার।
চরের বাসিন্দা বকুল মিয়া বলেন, দোকানে আর ধারও দেয় না। কাজ না থাকলে খাবো কি?
চরের কৃষক মতিয়ার রহমান বলেন, শীতবস্ত্র এলে গরীব মানুষ সহজে পায় না। আমাদের মতো লোকজন বছরের পর বছর একই অবস্থা।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের চরবাসী বরাবরই বঞ্চিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শীতের ধরন বদলেছে। খোলা চরে মানুষের জন্য আলাদা সুরক্ষা পরিকল্পনা থাকা দরকার-যেমন চরভিত্তিক মোবাইল হাসপাতাল, খাদ্যব্যাংক, দ্রুত নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, শীতবস্ত্র ক্রয়ের জন্য সরকার ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শীতার্ত মানুষের মধ্যে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হবে।