শিরোনাম

\ শফিকুল ইসলাম বেবু \
কুড়িগ্রাম, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে তীব্র শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ধরলা নদীবেষ্টিত চরাঞ্চলের মানুষ বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন।
আজ রোববার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ নেমে এসেছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। সঙ্গে বাতাসে ৯৯ শতাংশ আর্দ্রতা থাকায় শীতের তীব্রতা আরও বেড়েছে। ভোর থেকে ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
তীব্র শীতে কাজে বের হতে পারছেন না দিনমজুর, নৌকার মাঝি, কৃষিশ্রমিক ও ভ্যানচালকরা। এতে দিন এনে দিনে খাওয়া মানুষগুলো অনেক কষ্টে দিন পার করছেন। কাজে যেতে না পেরে তাদের আয়-রোজগার মোটামুটি বন্ধ হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারের সদস্যদের অনাহারে দিন কাটছে।
উলিপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বিচ্ছিন্ন বেগমগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, ৪৬ দশমিক ৯৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি চরে ৩২ হাজার মানুষের বসবাস। মশালের চর, মাঝেরচর, ফকিরেরচর, মোল্লারহাট, খুদিরকুটিসহ পুরো ইউনিয়নই নদীবেষ্টিত হওয়ায় হিমেল বাতাস ও প্রচণ্ড শীতে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল হলেই দুই থেকে তিনশ মানুষ আমার বাড়িতে ভিড় করছে কম্বলের আশায়। কিন্তুবরাদ্দ পেয়েছি মাত্র ১০০টি কম্বল। ৯টি ওয়ার্ডে এই কম্বল কিভাবে ভাগ করবো, সেটাই বড় চিন্তা। তার ওপর ব্রহ্মপুত্র নদ পাড়ি দিয়ে উপজেলা পরিষদ থেকে কম্বল আনতে প্রায় তিন হাজার টাকা খরচ হয়।
এদিকে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার মাদক প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি ও সমাজকর্মী আব্দুল আখের অভিযোগ করে বলেন, জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী জেলায় ৬১টি এনজিও কর্মরত থাকলেও এই দুর্যোগকালীন সময়ে শীতার্ত মানুষের পাশে তাদের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামে বসবাসরত মানুষের সংখ্যা প্রায় ২৩ লাখ ২৯ হাজার। এর মধ্যে ৭০ দশমিক ৮ শতাংশ দরিদ্র এবং ৫৩ দশমিক ২ শতাংশ হতদরিদ্র। হতদরিদ্র মানে—রাতে শুয়ে সকালে কী খাবে, তা জানে না। আবার ৩৭ শতাংশ মানুষ ভূমিহীন।
তিনি আরও বলেন, দুর্যোগকালীন সরকারি-বেসরকারি সহায়তা বিচ্ছিন্নভাবে দেওয়া হয়। এতে অনেক টাকা ব্যয় করেও কুড়িগ্রামে শীতবস্ত্র সঠিক মানুষের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিক অধ্যাপক লিয়াকত আলী বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২২ হাজার কম্বল ৯ উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নে বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু চরাঞ্চলের মানুষের হাতে এখনো শীতবস্ত্র পৌঁছেনি।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদ দিয়ে বিচ্ছিন্ন কালীর আলগা, গোয়াইলপুরী, ভগবতীপুর, ঝুনকার চর, মোল্লারহাট, মাঝেরচর, খুদিরকুটি, সুখেরবাতি, ঘুঘুমারি, মনতলা, শাখাহাতি, বড়বেরসহ ২৬৯টি চরের মানুষ এখনও শীতবস্ত্র থেকে বঞ্চিত।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, এখন পর্যন্ত জেলার ৯টি উপজেলায় ২২ হাজার কম্বল বরাদ্দ ও বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুর্গম চরাঞ্চলে শীতবস্ত্র না পৌঁছানোয় দুর্ভোগে পড়েছেন হাজারো অসহায় মানুষ।