শিরোনাম

শফিকুল ইসলাম বেবু
কুড়িগ্রাম, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরের সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে তীব্র শীত জনজীবনকে কার্যত স্থবির করে তুলেছে। জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর সঙ্গে ৯৯ শতাংশ আর্দ্রতা যুক্ত হওয়ায় শীতের অনুভূতি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ। এতে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নদীঘেঁষা চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ।
ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে মানুষ ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনমজুর, নৌকার মাঝি, কৃষিশ্রমিক ও ভ্যানচালকদের কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ না থাকায় অসংখ্য পরিবারের সদস্যরা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। খাবার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন অনেকে।
চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর, উলিপুর ও কুড়িগ্রাম সদরের বিভিন্ন চরাঞ্চলে দেখা গেছে, শীত নিবারণের মতো পর্যাপ্ত গরম কাপড়ের অভাবে শিশু ও বয়স্করা বেশি কষ্টে রয়েছেন। অনেকেই ছেঁড়া কাপড়, বস্তা জড়িয়ে রাত কাটাচ্ছেন।
চর রাজিবপুর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন কোদালকাটি ইউনিয়নের বরবের চরের দিনমজুর কোবাদ আলী বলেন, ভোরে কাজে বের হলে হাত-পা শক্ত হয়ে যায়। কাজ নেই, আয় নেই—কিন্তু পরিবার তো না খেয়ে থাকতে পারে না।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের যাত্রাপুর ব্রহ্মপুত্র ঘাটের নৌকার মাঝি শাহ আলম জানান, নদীতে কুয়াশা এত বেশি যে নৌকা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। দুই দিন ধরে কোনো আয় ইনকাম নেই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শীত বাড়লেও চরাঞ্চলে এখনও পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পৌঁছেনি। সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
এ বিষয়ে যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান রহিম উদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, শহরে শীত সহনীয় হলেও চরাঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখানকার মানুষ দিন এনে দিন খায়। কাজ বন্ধ মানেই না খেয়ে থাকা।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আজ রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন তাপমাত্রা আরও কমতে পারে এবং শৈত্যপ্রবাহের আশঙ্কা রয়েছে। এতে শীতজনিত রোগের ঝুঁকিও বাড়ছে।
কুড়িগ্রামের সশস্ত্র বাহিনীর চিকিৎসক ডা. রকিবুল হাসান বাঁধন বলেন, এই শীতে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি অনেক বেড়েছে। গরম কাপড় ব্যবহার ও সতর্কতা জরুরি।
কুড়িগ্রামের ৭৩টি ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা চরাঞ্চলসহ সব এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র বিতরণ ও মানবিক সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, চরাঞ্চলের সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের মধ্যে প্রতিবন্ধীসহ জেলার মোট ১১ হাজার ৯৮৯ জন প্রতিবন্ধী এখন কাহিল অবস্থায় রয়েছে। জরুরিভিত্তিতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে।
এদিকে জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, নয় উপজেলায় ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা ২২ হাজার কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।