বাসস
  ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:০৩

আজ ১৯ ডিসেম্বর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী মুক্ত দিবস

॥ মনোজ কুমার সাহা ॥
টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ), ১৯ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস): আজ ১৯ ডিসেম্বর, কাশিয়ানী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এইদিনে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলা হানাদার মুক্ত হয়। 
মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর আক্রমনে পাকিস্তানি বাহিনীর দখলে থাকা কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়া ওয়্যারলেস স্টেশনের ক্যান্টনমেন্টের পতন ঘটে এইদিনে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হলেও কশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়ায় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা ওড়ে ১৯ ডিসেম্বর সকালে।
ভাটিয়াপাড়া শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী জনতার সমাবেশ মধ্যদিয়ে দিবসটি উদযাপন করবে কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। 
মুক্তিযুদ্ধ কালীন কাশিয়ানী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক  কামান্ডার এনায়েত হোসেন জানান, গোপালগঞ্জ-ফরিদপুর-নড়াইল জেলার সীমান্তে অবস্থিত এবং ভৌগলিক ও যুদ্ধের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ন রেলস্টেশন ও নদী বন্দর ভাটিয়াপাড়া দখল নিয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে লড়াই হয় কয়েক দফা। পাকিস্তানি বাহিনীর ভাটিয়াপাড়া মিনি ক্যান্টনমেন্টটি গোপালগঞ্জ জেলার অন্তর্ভূক্ত হলেও ফরিদপুর-নড়াইল-গোপালগঞ্জ অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তু ছিলো ভাটিয়াপাড়ার ওই মিনি ক্যান্টনমেন্টটি। তাই এখানে তুমুল লড়াই হয়। 
কাশিয়ানী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ১৯৭১ সালের মে মাসে এখানে ওই অয়্যারলেস স্টেশনে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে। দীর্ঘ ৭ মাসব্যাপী ৬৫ পাকিস্তানি সেনার শক্তিশালী একটি গ্রুপ এখানে অবস্থান করে এলাকার নিরীহ মুক্তিকামী মানুষের উপর নির্যতন, নিপীড়ন ও গণহত্যাযজ্ঞ চালায়। অনেক মুক্তিকামী মানুষকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী লাশ ভাটিয়াড়ার দিয়ে প্রবাহিত মধুমতি নদীতে ভাসিয়ে দিতো। পাকিস্তানি বাহিনীর একটি দল গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা সংলগ্ন জয়বাংলা পুকুরপাড়ের মিনি ক্যান্টনমেন্টন থেকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ৬ ডিসেম্বর রাতে পালিয়ে গিয়ে ভাটিয়াপাড়ার ওই ক্যাম্পে অবস্থান নেয়। ভাটিয়াপাড়ার পাকিস্তানি বাহিনীর মিনি ক্যন্টনমেন্টটি দখলে নিয়ে ৬ নভেম্বর দু’টি মারাতœক যুদ্ধ হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে টানা ১৫ ঘন্টা পাকিস্তানি বাহিনীর যুদ্ধ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ঘায়েল করতে পাকিস্তানি বাহিনী আকাশ পথে বিমান থেকে গুলি ও বোমা বর্ষণ করতে থাকে। কিন্তু সেদিন অসীম সাহসী মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটেনি। এ যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী যথেষ্ট ঘায়েল হয়। সে সময় মুক্তিযোদ্ধা মীর মহিউল হক মিন্টু , সাধুহাটির এ কিউএম জয়নুল অবেদীন শহীদ হন। 
মোক্তার হোসেন বলেন, ওই অয়্যারলেস ক্যাম্প দখল নিয়ে দ্বিতীয় দফায় যুদ্ধ হয় ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিনে। তিনদিন যুদ্ধের পর ১৯ ডিসেম্বর খুব ভোরে নড়াইল গোপালগঞ্জ ও ফরিদপুরের দিক থেকে মুক্তিবাহিনীর কমান্ডারগণ সম্মিলিতভাবে ভাটিয়াপাড়া ক্যান্টনমেন্টে আক্রমন চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বাতœক এ হামলা ও বীরোচিত সাহসী যুদ্ধে অবশেষে ১৯ ডিসেম্বর সকাল ১০ টার দিকে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর যৌথ কমান্ডের কাছে ৬৫ জন পাকিস্তানি সেনা আতœসমার্পন করে। এ যুদ্ধে ৬ পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান সিকদার, অনিল কুমার বিশ্বাস, মজিবর রহমান,মোহাম্মদ হান্নান শেখ  নিহত হয়।
এরপর ভাটিয়াপাড়ার ওয়্যারলেস স্টেশনের মিনি ক্যান্টনমেন্টে উড়ানো হয় বাংলাদেশের মানচিত্র  ও লাল সূর্য খচিত গাঢ় সবুজ জমিনের বিজয় পতাকা। এরই মধ্যদিয়ে হানাদার মুক্ত হয় কাশিয়ানীর ভাটিয়াপাড়াসহ সমগ্র গোপালগঞ্জ অঞ্চল। মুক্তিযোদ্ধারা আনন্দে আতœহারা হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বিজয় মিছিল বের করেন। হাজার-হাজার মুক্তিকামী মানুষ এ বিজয় মিছিলে অংশ নিয়ে অনন্দ উল্ল¬াসে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। 
কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুজ্জামান বলেন, ভাটিয়াপাড়া যুদ্ধক্ষেত্রের স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাটিয়াড়া যুদ্ধক্ষেত্রের শহীদ ও মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মউৎসর্গকারী ৩০ লাখ শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া-মোনাজাত করা হবে। এতে উপজেলা প্রশাসন, পরিষদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেবেন
 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়