নতুন দুর্নীতি মামলায় নাজিব রাজাকের আরও ১৫ বছরের কারাদণ্ড
ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ানএমডিবি (১এমডিবি)-সংক্রান্ত দুর্নীতিতে নতুন করে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাককে আরও ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত। শুক্রবার ক্ষমতার অপব্যবহার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় দেন বিচারক কলিন লরেন্স সেকুয়েরাহ।
পুত্রাজায়া থেকে এএফপি জানায়, আদালত নাজিবকে ১১৪০ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত (প্রায় ২৮০ কোটি ডলার) অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত করেন। এক দশকেরও বেশি আগে এখন বিলুপ্ত ১এমডিবি থেকে বিপুল অঙ্কের অর্থ লুটে নেওয়ার ঘটনায় তার ভূমিকার জন্য এ সাজা দেওয়া হয়।
এর আগে আলাদা একটি ১এমডিবি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে নাজিব ছয় বছরের কারাদণ্ড ভোগ করছেন। বিচারক জানান, নতুন করে দেওয়া ১৫ বছরের সাজা আগের সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কার্যকর হবে।
৭২ বছর বয়সী নাজিবের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের চারটি এবং অর্থ পাচারের ২১টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এসব অভিযোগে প্রায় ২২৮ কোটি মালয়েশীয় রিঙ্গিত (প্রায় ৫৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার) সংশ্লিষ্ট ছিল।
রায় ঘোষণার সময় নীল স্যুট ও সাদা শার্ট পরা নাজিবকে আসনে হেলান দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখা যায়। প্রায় আট ঘণ্টার দীর্ঘ শুনানি শেষে রায় পড়েন বিচারক।
মালয়েশিয়ার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতার পুত্র নাজিব অল্প বয়স থেকেই নেতৃত্বের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তবে দুর্নীতি কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে জনরোষের মুখে পড়ে তিনি ২০১৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতা হারান। এরপর ধারাবাহিক তদন্তে নাজিব ও তার স্ত্রী রসমাহ মানসুরের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
কৌঁসুলিরা বলেন, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও ১এমডিবির উপদেষ্টা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে নাজিব নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে তহবিলের বিপুল অর্থ ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেন। তদন্তকারীদের মতে, ওই অর্থ দিয়ে উচ্চমূল্যের সম্পত্তি, বিলাসবহুল ইয়ট এবং মোনে ও ভ্যান গঘের চিত্রকর্মসহ দামী শিল্পকর্ম কেনা হয়।
নাজিবের আইনজীবীরা দাবি করেন, তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও রহস্যময় ব্যবসায়ী লো তায়েক জো (জো লো) তাকে প্রতারিত করেছিলেন। তবে বিচারক এই যুক্তি নাকচ করে বলেন, প্রমাণে স্পষ্ট, জো লো ১এমডিবির কার্যক্রমে নাজিবের ‘প্রক্সি বা প্রতিনিধি’ হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি প্রতিরক্ষার যুক্তিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেন।
নাজিবের আইনজীবী মুহাম্মদ শাফি আবদুল্লাহ জানান, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। তার অভিযোগ, বিচারক ‘গুরুতর ভুল’ করেছেন।
২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরপরই নাজিব ১এমডিবি চালু করেন। অভিযোগ রয়েছে, কোনো আনুষ্ঠানিক পদ না থাকলেও জো লো তহবিল গঠনে সহায়তা করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখেন। ধারণা করা হয়, ২০০৯ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে ১এমডিবি থেকে ৪৫০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। পলাতক জো লো এখনও ধরা পড়েননি।
বিচারক মধ্যপ্রাচ্যের দাতাদের, এমনকি প্রয়াত সৌদি বাদশাহ আবদুল্লাহর নাম জড়িয়ে অর্থপ্রবাহের ব্যাখ্যাও নাকচ করে বলেন, এটি ‘আরব্য রজনীর গল্পকেও ছাড়িয়ে যায়’।
নাজিব দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, তার মেয়াদে ১এমডিবি কেলেঙ্কারি ঘটতে দেওয়ার জন্য তিনি অনুতপ্ত। তবে তিনি ধারাবাহিকভাবে সব ধরনের অনিয়মের কথা অস্বীকার করে আসছেন।