জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনে প্রধান বাধা: টিআইবি
ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): রাষ্ট্রীয় অঙ্গীকার ও বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি থাকা সত্ত্বেও জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর কৌশলগত প্রাধান্য ও অতিনির্ভরশীলতাই বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
টিআইবি পরিচালিত ‘বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সুশাসনের ঘাটতি, নীতিগত অবহেলা এবং স্বার্থান্বেষী মহলের প্রভাব নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি তৈরি করছে।
বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি বিভাগের পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম। প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন টিআইবির এনার্জি গভর্নেন্স বিভাগের কো-অর্ডিনেটর নেওয়াজুল মওলা ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর আশনা ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ খাতের নীতি ও মহাপরিকল্পনা উদ্দেশ্যমূলকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানিকে কেন্দ্র করে প্রণয়ন করা হয়েছে। ফলে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে উত্তরণের সম্ভাবনা ও অঙ্গীকার বাস্তবায়িত হচ্ছে না।
তিনি বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বাজেট বরাদ্দ অত্যন্ত নগণ্য এবং এ খাতকে নীতিগতভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে।
ভূমি স্বল্পতাকে নবায়নযোগ্য জ্বালানির বাধা হিসেবে তুলে ধরার যুক্তিকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই খাতে যেটুকু বিনিয়োগ হয়েছে, তাতেও অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থের অপচয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে। জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুৎ খাতে যে দুর্নীতির সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, তার সংক্রমণ নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০’-এর অপব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র ছাড়াই উচ্চ ট্যারিফে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করা হচ্ছে। সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রকৃত ব্যয়ের তুলনায় প্রায় দেড় গুণ বেশি ব্যয় দেখিয়ে প্রায় ২ হাজার ৯২৬ কোটি টাকার অতিরিক্ত ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে।
এছাড়া, গবেষণার আওতাভুক্ত পাঁচটি প্রকল্পে ভূমি ক্রয় ও ক্ষতিপূরণ বাবদ ২৪৯ কোটি টাকার বেশি দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বিদ্যুৎ খাতে বিদেশি বিনিয়োগের প্রায় ৯৭ শতাংশই যাচ্ছে জীবাশ্ম জ্বালানিতে, আর নবায়নযোগ্য খাতে বিনিয়োগ মাত্র ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। এই প্রবণতা পরিবেশ ও অর্থনীতির জন্য আত্মঘাতী বলেও প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতের সুশাসন নিশ্চিত করতে টিআইবি ১৫ দফা সুপারিশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভর বিদ্যমান জ্বালানি মহাপরিকল্পনা বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে প্রাধান্য দিয়ে নতুন মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি ও আইন সংস্কার, নেট মিটারিং ও ফিড-ইন ট্যারিফ কার্যকর, একটি স্বাধীন তদারকি কর্তৃপক্ষ গঠন, স্রেডাকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর এবং বিদ্যুৎ খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।