শিরোনাম
সুনামগঞ্জ, ১ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : বাংলদেশে পুরুষ হকির ইতিহাসটা পুরনো হলেও নারী হকির কথা সম্প্রতি বেশ আলোচনায় এসেছে। যদিও নারী হকিতে দিনাজপুরের মেয়েদের দাপট থাকলেও অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে দেখা যাবে সুনাগঞ্জের মেয়ে ইমা তালুকদারকে।
হাওরপাড়ের মেয়ে ইমা তালুকদারের ছোট বেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি ঝোঁক ছিল। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলার প্রতি এমন আগ্রহ দেখে অভিভাবকরা তাকে কোন দিন মানা করেননি। তার ইচ্ছাশক্তির প্রতি অভিভাবকদেরও নজর ছিল।
সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক ইউনিয়নের ঢালাগাঁও গ্রামের মুসলিম তালুকদার ও মাজেদা তালুকদারের নয় সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ইমা তালুকদার।
ইমরা বাবা বলেছেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলায় এমন মনোযোগী দেখে আমরা অভিভুত হতাম। খেলার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে ভর্তি করে দেই বিকেএসপিতে।
সেখান থেকেই খেলাধুলার প্রতি আরো ঝোঁক বাড়ে। সেখান থেকেই তার যাত্রা শুরু। ইমা তালুকদার তার অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
চীনে অনুষ্ঠিতব্য অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে অংশ নিতে বাংলাদেশ নারী হকি দল গতকাল চীনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছে। সেই দলেরই একজন অপরিহার্য্য সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রমান করেছেন ইমা। একজন প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়ার হিসেবে ইমা তালুকদার বাংলাদেশের ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে পরিনত করেছেন।
এ বছর বিকেএসপি থেকে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তার জার্সি নম্বর ১৬। ২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ইমা। গত বছর সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ হকিতে বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয়, যেখানে ইমা লাল-সবুজ জার্সিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। এরপর একই বছর ডিসেম্বরে ওমানে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বাংলাদেশ দশটি দলের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করে।
এর আগে কখনো অনূর্ধ্ব-১৮ পর্যায়ে এশিয়া কাপে বাংলাদেশ নারী দল অংশ নেয়নি। চলতি অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশ দল গ্রুপ পর্বে ৪ জুলাই জাপান, ৫ জুলাই উজবেকিস্তান ও ৭ জুলাই হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ খেলবে। গ্রুপ পর্ব শেষে ৯ জুলাই সেমিফাইনাল ও ১৩ জুলাই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ জুলাই দেশে ফেরার কথা রয়েছে বাংলাদেশ দলের।
ইমার বড় ভাই হোসাইন আহমদ জানান, ইমা ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলা পছন্দ করত। আমরা কখনো বাঁধা দেইনি, উৎসাহ দিয়েছি। আজ সে আমাদের পরিবারের নয়, সুনামগঞ্জ জেলার গর্ব।
এশিয়া কাপে যাবার আগে ইমা বলেছেন, আমি এখনও শিখছি। প্রতিদিন নতুন কিছু জানতে পারছি, বুঝতে চেষ্টা করছি। বিকেএসপির সহায়তায় আমার খেলায় আমি দক্ষতা অর্জন করছি। দেশের হয়ে চীনে খেলতে যাচ্ছি এটা আমার জীবনের অনেক বড় অর্জন। দেশের সম্মান যাতে আরো উজ্জ্বল করতে পারি এটাই আশা সকলের প্রতি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে ইমা দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আশার প্রদীপ। অভিভাবক ও স্বজনদের সদিচ্ছা থাকলে ইমা তালুকদারের মতো আরো খেলোয়ার সৃষ্টি হবে এই জেলায়। এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।