বাসস
  ২৯ জুন ২০২৫, ২১:৩২

আষাঢ়ের বিকেলে বাংলা একাডেমিতে আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্মরণে সেমিনার অনুষ্ঠিত

ছবি: বাংলা একাডেমি

ঢাকা, ২৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : শিক্ষাবিদ, কবি ও লেখক আবু হেনা মোস্তফা কামাল ছিলেন বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব। সৃষ্টিশীলতা দিয়ে মেধাবী এই মানুষটি তাঁর ধীশক্তি ও মনীষা দিয়ে দেশবিদেশে অগুনতি মানুষকে মুগ্ধ করে রেখেছিলেন।

রোববার বিকেলে রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে শিক্ষাবিদ, কবি ও লেখক আবু হেনা মোস্তফা কামাল স্মরণে আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

তারা বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল শুধু কবি, গীতিকার ও শিক্ষাবিদ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন না, তিনি তাঁর সাহিত্যজীবনেও রেখেছিলেন বিষয়ভিত্তিক নানামাত্রিক নতুন সব ভাবনার স্বাক্ষর। আবু হেনা মোস্তফা কামালের স্বল্পায়ু জীবনে তাঁর স্বাতন্ত্র্যবোধ আজও সমাদৃত। শিক্ষক হিসেবেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্নমাত্রার একজন ব্যক্তিত্ব।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আজফার হোসেন। সভাপ্রধানের দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক।

স্বাগত বক্তৃতায় অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল বাংলাদেশের সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বহুল আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তাঁর কবিতার সারল্য ও গভীরতা যেমন পাঠককে স্পর্শ করে তেমনি তাঁর গীতিকার-সত্তাও কবি-পরিচয়ের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত।

তিনি বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামালের রচনা কিন্তু অনন্য। তাঁর মতো একজন স্মরণীয় শিক্ষক এবং সপ্রতিভ বুদ্ধিজীবীকে অনুধাবন করা আমাদের নাগরিক সংস্কৃতির সঠিক পাঠের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন বর্ণাঢ্য সাহিত্য ব্যক্তিত্ব। নিজের সাহিত্য ও শিক্ষকতা জীবনে যেমন তিনি অনন্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন তেমনি স্বল্পকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও তিনি উদ্ভাবনময়তা ও সৃজনশীলতার উদাহরণ রেখে গেছেন।

লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল শিক্ষক হিসেবে ছিলেন বন্ধুর মতো, লেখক হিসেবে বহুমাত্রিক। তাঁর কথকতার সুনাম বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রবাহিত। প্রবন্ধ-গবেষণায় তাঁর কাজ খুব বেশি নয় কিন্তু যথেষ্ট মূল্যবান। বাংলা গদ্য নিয়ে গবেষণার পাশাপাশি কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে তাঁর প্রাবন্ধিক আগ্রহ ছিল অপরিসীম।

তিনি আরো বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল তাঁর নজরুল বিষয়ক মূল্যায়নে বুদ্ধদেব বসু, সৈয়দ আলী আশরাফ, আহমদ শরীফ কিংবা হুমায়ুন আজাদের মতো বৈরী সমালোচকের মোকাবেলা করেছেন এবং নজরুলকে তাঁর সত্য মূল্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন। বাংলা একাডেমির উচিত আবু হেনা মোস্তফা কামালের নজরুল বিষয়ক সমস্ত রচনার একটি সংকলন প্রকাশ করা।

অধ্যাপক আজফার হোসেন বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল কিংবদন্তিতুল্য শিক্ষক এবং বাগ্মী। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য লালন করতেন প্রবল ভালোবাসা ও প্রগাঢ় অঙ্গীকার। কবিতাকে তিনি জীবনের ধ্রুবতারা মনে করতেন, কবিতাহীন জীবনকে মৃত আত্মার সঙ্গে তুলনা দিতেন।

তিনি বলেন, স্বল্পায়ু সাহিত্যজীবনে তিনি লিখেছেন কম, কিন্তু যা লিখেছেন প্রতিটিতেই তাঁর নিজস্বতা স্পষ্ট। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখকদের নিয়ে তাঁর প্রবন্ধগুলো নতুন ভাবনার সঞ্চার করে।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল একজন বর্ণাঢ্য সাহিত্য ব্যক্তিত্ব। তিনি শিক্ষাবিদ, কবি, প্রাবন্ধিক-গবেষক এবং বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক। নিজের সাহিত্য ও শিক্ষকতা জীবনে যেমন তিনি অনন্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন তেমনি স্বল্পকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবেও তিনি উদ্ভাবনময়তা ও সৃজনশীলতার উদাহরণ রেখে গেছেন।

আবু হেনা মুস্তফার কামালের ছেলে নজরুল সঙ্গীত শিল্পী সুজিত মুস্তফা বলেন, আজ এখানে এসেছি আমার বাবা হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন। আমার পেছনে নেপথ্যজন হিসেবে সারাজীবন আমাকে আগলে রেখেছেন।

তিনি বলেন, তিনি একজন অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাঁর শূন্যতার এখন অনুধাবন করি। আবু হেনা মুস্তফা কামালের সৃষ্টি নিয়ে নানা ধরনের কাজ হওয়া দরকার।

পাশাপাশি তাঁর সৃজনশীলতা সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকেও জানতে হবে।