বাসস
  ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৬

দিনাজপুর পাক হানাদার মুক্ত দিবস আজ

ছবি: বাসস

দিনাজপুর, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর জেলা পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়েছিল। এইদিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে দিনাজপুর শহরকে মুক্ত ঘোষণা  করেন।  

বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফরহাদ হোসেন বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ৭ নম্বর সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিত ভাবে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত ও বিতাড়িত করে। এদিন দিনাজপুর জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। এ উপলক্ষে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭১-এর ১৮ ডিসেম্বর শহরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে আনুষ্ঠানিক ভাবে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি সেনারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলায় মুক্তিযোদ্ধারা ৫১ জন রাজাকারকে বন্দি করে।

১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বিরলে পাকিস্তানি সেনাদের ঘাঁটিতে হামলা চালান। ১১ ডিসেম্বর বিরলে পাক হানাদার বাহিনী হামলা চালিয়ে অনেক নিরীহ মানুষকে হত্যা করে পালিয়ে যায়।

১৩ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনী জেলার বিরল উপজেলায় ৪৪ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়।

১৪ ডিসেম্বর বিরল উপজেলার মঙ্গলপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিত্রবাহিনী যোগ দেয়। এরপর ওই দিন পাক হানাদারেরা কাঞ্চন নদীর রেলওয়ের লোহার ব্রিজ, ভুষির বন্দর ব্রিজ, মোহনপুর ব্রিজ, দিনাজপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভেঙে দেওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা ক্ষতি করেছিল।
১৩ ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে ওই দিন মধ্যরাতে পাকিস্তানি সেনারা সৈয়দপুরের দিকে পালিয়ে যায়। ১৪ ডিসেম্বর সকাল  থেকেই হতেই দিনাজপুরে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতা গামী জনগণ শহরে উল্লাস করে দিনাজপুর মুক্ত ঘোষণায় পতাকা নিয়ে উৎসব মিছিল করেছিল একাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা এই নিশ্চিত করেছেন।

দিনাজপুর সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও সাবেক পৌর সভার মেয়র মোহাঃ সফিকুল হক ছুটু জানান, ১৯৭১-এ ১৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে  চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধা আর মিত্রবাহিনী দিনাজপুর শহরের বাহাদার বাজারে এসে বিজয় উল্লাস করতে থাকেন। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন হয়েছিল। এরপর থেকে জেলা শহরে সর্বত্রই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হয়েছিল।

দিনাজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবং জেলা বিএনপি'র মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মকসেদ আলী মঙ্গলীয়া বলেন, দিনাজপুর সীমান্তবর্তী জেলা। মুক্তিযোদ্ধারা সেই সময়ে বিভিন্ন দিক দিয়ে দিনাজপুরে প্রবেশ করেন। কেউ আগে প্রবেশ করতে পেরেছেন, আবার কেউ প্রবেশ করতে পারেননি। প্রথম মুক্তি বাহিনীরা ১৪ ডিসেম্বর পাক বাহিনী মুক্ত করে শহরে প্রবেশ করায়, ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর শত্রু মুক্ত হয়েছিল। আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর শহরে পাক বাহিনীকে বিতাড়িত করে মুক্তির স্লোগানে উল্লাস মিছিল করেছি। সেই থেকেই ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছেন।

আজ ১৪ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস উপলক্ষে দিনাজপুরের চেহেলগাজীতে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়াও শহরের মসজিদগুলোতে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়।