শিরোনাম

শফিকুল ইসলাম বেবু
কুড়িগ্রাম, ৫ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কুড়িগ্রামে শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। টানা চার দিন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলেও আজ শুক্রবার সকাল ৬ টায় জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে জেলায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের প্রকোপ অনেকটাই অনুভূত হচ্ছে। এতে মানুষের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে শীতে গ্রামে ও চরের মানুষের কষ্ট বেশি পোহাতে হচ্ছে।
রাজারহাট কৃষি ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, আগামী সাত দিন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকতে পারে, যা শীতের তীব্রতা আরও বাড়াবে।
এদিকে ভোরের কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে জেলার বিভিন্ন এলাকা। সকালে রাস্তাঘাটে যানবাহন কম দেখা যায়।
গাড়ি চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। কুয়াশা এতটাই ঘন যে, অল্প দূরত্বেও কিছু দেখা যায় না। মানুষজনও ঘর থেকে কম বের হচ্ছে প্রয়োজন ছাড়া। সকাল ১০টার দিকে সূর্যের দেখা মিললেও তাপ থাকে ক্ষীণ। তাই দুপুর পর্যন্ত শীত অনুভূত হয় তীব্রভাবে।
শীতের দাপটে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক, জেলে, কৃষিশ্রমিক ও ভ্যানচালকরা। ঠান্ডার কারণে তারা কাজে বের হতে পারছেন না। আবার অনেকে কাজেও নিচ্ছে না কুয়াশার কারণে। এত দৈনিক রোজগার কমে গেছে তাদের। কোনোভাবে খেয়ে দিন পার করছেন তারা। অনেকের যথাযথ শীতবস্ত্র না থাকায় আরেক ধরনের কষ্টে পড়েছেন। ব্রহ্মপুত্রবেষ্টিত কুড়িগ্রাম সদর, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুরের চরাঞ্চলে শীতের তীব্রতা আরও বেশি অনুভূত হচ্ছে। খোলা মাঠ, বাতাস ও কুয়াশা চরবাসীর জীবনকে কঠিন করে তুলেছে।
জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামে প্রায় ২৪ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে ৭০.৮ শতাংশ দরিদ্র অর্থাৎ প্রায় ১৭ লাখ মানুষ দরিদ্র। এছাড়া ৫৩.২ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ১২ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ হতদরিদ্র। দিনের বেলায় কি খাবেন জানেন না অনেকেই। এর ওপর শীত তাদের জীবনে নতুন সংকট এনে দিয়েছে।
তিনি আরও জানান, সরকারি হিসেব অনুযায়ী জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৮৯ জন প্রতিবন্ধী মানুষ বাস করেন।
খাবার, চিকিৎসা এসব কিছুর সঙ্গে এখন শীতও তাদের বড় দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি জেলা প্রশাসনসহ বিত্তবানদের দ্রুত শীতবস্ত্র বিতরণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, শীতার্ত মানুষের জন্য জেলার ৯টি উপজেলায় কম্বল কেনার জন্য ৬ লাখ টাকা করে মোট ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ জানান, ৮০ হাজার কম্বলের চাহিদাপত্র রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলা সদর হাসপাতালসহ ৯ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীতজনিত সর্দি-কাশি, জ্বর ও নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসকেরা জানান, শীতকালে শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে ঝুঁকিতে।