শিরোনাম

কালাম আজাদ
বগুড়া, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গেল মৌসুমে আলুর কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেলেও চলতি মৌসুমে বগুড়ায় ব্যাপক পরিসরে আলুর চাষ হয়েছে। বর্তমানে আলু রোপণ শেষে ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।
কোথাও জমিতে সেচ ও সার দেওয়া হচ্ছে, আবার কোথাও গাছের সারিতে মাটি তুলে দেওয়া ও আগাছা পরিষ্কারের কাজ চলছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দামের আশায় দিন কাটছে কৃষকদের। তবে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে আলু ক্রয়ের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শস্যভাণ্ডার খ্যাত বগুড়ার মাঠজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। আলু ক্ষেতে তরতাজা সবুজ গাছ বেড়ে উঠছে, যা কৃষকদের মনে নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ভালো ফলনের প্রত্যাশায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে। যা গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর বেশি। নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আলু রোপণ শেষে জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত আলু উত্তোলন করা হয়ে থাকে।
বগুড়ায় পাকড়ি, এস্টারিক্স, কার্ডিনাল, ডায়মন্ড, গ্র্যানোলাসহ প্রায় ৩০ জাতের আলু চাষ হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে আলু চাষে ৩৫ থেকে ৪২ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। জাতভেদে প্রতি বিঘায় ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ১২০ মণ পর্যন্ত আলু উৎপাদন হয়ে থাকে।
জেলার শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম, শাজাহানপুরসহ প্রায় সব উপজেলাতেই ব্যাপক আকারে আলু উৎপাদন হয়। এরই মধ্যে আগাম জাতের আলু হাট-বাজারে উঠতে শুরু করেছে। বর্তমানে আগাম জাতের আলু ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
শিবগঞ্জ উপজেলার আলু চাষি আব্দুল করিম বলেন, গেল বছর আলুর দাম ঠিকমতো পাইনি। এবার বীজ, সার আর শ্রমিকের খরচ অনেক বেড়েছে। ভালো ফলন হলেও ন্যায্যমূল্য না পেলে আমাদের লোকসান হবে। সরকারিভাবে আলু কিনলে আমরা উপকৃত হব।
নন্দীগ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতি বিঘায় এবার ৪০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। বাজারে দাম না থাকলে এত খরচ উঠানো কঠিন। সরকার সরাসরি আলু ক্রয় করলে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাতে আমরা ঠকব না।
শাজাহানপুর উপজেলার চাষি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আলুর ফলন ভালো হওয়ার আশা করছি। কিন্তু ফলন ভালো হলেই দাম পড়ে যায়—এই ভয় আমাদের সব সময় থাকে। ন্যায্যমূল্য পেতে হলে সরকারিভাবে আলু ক্রয় ব্যবস্থা চালু করা জরুরি।
এ বিষয়ে বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সোহেল মোহাম্মদ সামছুদ্দীন ফিরোজ বলেন, উন্নত জাত ও রপ্তানিযোগ্য আলু চাষে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। রোগবালাই দমন ও উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়েও কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
তিনি আরও জানান, বগুড়া জেলায় বছরে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়ে থাকে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে বগুড়ার আলু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।