শিরোনাম

মহিউদ্দিন সুমন
টাঙ্গাইল, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর তীরবর্তী ভূঞাপুর উপজেলার চরাঞ্চলে ভুট্টা ও বাদাম চাষে সফলতা অর্জনের পর এবার হলুদ তরমুজ চাষে সফলতা অর্জন করেছেন সুমন মিয়া।
জেলার ভূঞাপুরে উপজেলার চরাঞ্চল গাবসারার ফলদাপাড়া নদী ভাঙন এলাকায় এক সময় অনাবাদি জমি আর ঝুঁকিপূর্ণ চাষাবাদই ছিল কৃষকদের নিয়তি। এ সব জমিতে বাদাম, ভুট্টা কিংবা ক্ষতিকর তামাক ছাড়া অন্য তেমন ফসল উৎপাদন করতো না কৃষক। কিন্তু সকলের ধারণা বদলে দিয়ে ইউটিউব দেখে নিজ উদ্যোগে প্রথমবার তরমুজ চাষ করে এখন সফলতা অর্জন করেছেন ভূঞাপুর সরকারি ইব্রাহিম খাঁ কলেজের ডিগ্রীর শিক্ষার্থী সুমন মিয়া (২৮)
স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, যমুনা নদী তীরবর্তী চরাঞ্চলের সরকারি ভাবে কৃষকের মাঝে তরমুজ চাষ ছড়িয়ে দিতে পারলে এবং তারা সরকারি প্রণোদনা পেলে এক দিকে একই জমির বহু ব্যবহারে কৃষকের আয় যেমন কয়েক গুণ বাড়বে, তেমনি দেশে তরমুজের চাহিদা মেটাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলার ভূঞাপুর, নাগরপুর, কালিহাতী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চরাঞ্চলে এ বছর ৪ হেক্টর জমিতে নিজ উদ্যোগে কৃষকরা চাষ করছেন তিন জাতের তরমুজ। কম খরচে বেশি লাভের আশায় চরাঞ্চলে এখন সবুজ লতায় ভরে উঠেছে মাঠ। কম খরচে দাম বেশি পাওয়ায় অফ সিজনের তরমুজ চাষে আগ্রহ বাড়ছে জেলার কৃষকদের মাঝে।
আলাপকালে তরমুজ চাষী সুমন মিয়া জানান, ইউটিউবে এই তরমুজের ফলন দেখে আমার খুব শখ জাগে। ইউটিউব দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে চিন্তা করলাম একবার পরীক্ষা করেই দেখি। এরপর সাহস করে ৫ বিঘা জমি লিজ নেই। ব্যক্তিগত উদ্যোগে এ বছরেই প্রথম এই হলুদ তরমুজের চাষ শুরু করি। এ জমিতে তৃপ্তি, মধুমালা ও পাকিজা জাতের তরমুজের বীজ রোপন করি। মোট জমিতে আমার ৫ হাজার তরমুজ গাছে তরমুজ হয়েছে। তৃপ্তি, মধুমালা তরমুজ সাধারণত বাহিরে হলুদ রঙের হয় এবং পাকিজা জাত তরমুজের বাহিরের রং মূলত সবুজ হয়। তবে ভিতরে রং লাল টুকটুকে। খেতে খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। সব মিলিয়ে আমার মোট ব্যয় হয়েছে মোট প্রায় ৬ লাখ টাকা। ৫ বিঘা জমিতে পাঁচ লাখ টাকা লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন সুৃমন মিয়া।
তিনি জানান, এই তরমুজ মূলত শীত মৌসুমের ফসল। মাত্র ৩ মাসেই এর ফলন পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে আমার জমিতে ফল বড় হয়েছে, ফলনও ভালো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ক্ষেত থেকে বিষমুক্ত এসব তরমুজ তুলে বিক্রি শুরু হবে। পতিটি তরমুজের গড় ওজন প্রায় ৫-৭ কেজি।
বর্তমানে সুমন মিয়ার হলুদ তরমুজ ক্ষেত দেখতে আশেপাশের এলাকা থেকে মানুষ তার ক্ষেতে ছুটে আসছেন ।
আগামিতে অনেকেই এই তরমুজ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বলে জানান, সুমন মিয়া। কম খরচে বেশি লাভবান হওয়ায় এবং প্রচুর ফলন হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক কৃষক এই তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন অনেক কৃষক। আগামীতে তিনি আরও বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে তরমুজ চাষ করবে বলে আমাদের ব্যক্ত করেন।
কৃষক সুমন মিয়া আরও জানান, ভূঞাপুরের চরাঞ্চল বালুমাটি তরমুজ চাষ দেখাচ্ছে কৃষকদের নতুন পথ। সঠিক পরিকল্পনা আর সহায়তা পেলে এই স্বপ্নই হতে পারে চরাঞ্চলের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করেন তিনি। যেসব কৃষক এ চরাঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ তামাক চাষ করত তারা আমার সাফল্য দেখে অন্তত ১০ জন আগামী বছর থেকে তরমুজ চাষ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এখানকার কৃষকদের সরকারিভাবে তরমুজ চাষে প্রশিক্ষণ ও প্রনোদনা দেয়া গেলে চরাঞ্চলের কৃষকরা তরমুজ চাষে সফলতা অর্জন করতে পারবে।
ভূঞাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান জানান, দেশে যে তরমুজগুলো চাষ হয় তার মধ্যে গোল্ডেন ক্রাউন্ট একটি নতুন জাতের তরমুজ। এটি সাধারণত মৌসুম ছাড়া চাষ করা হয়। এটি আকারে একটু ছোট হয় এবং বাইরে থেকে এটি হলুদ রংয়ের হলেও এর ভেতরটা লাল রংয়ের হয়। এটি খেতেও সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এছাড়া এটি প্রচুর পরিমাণে ফল ধরে এবং মৌসুম ছাড়া হয় বলে এর বাজারমূল্য বেশ ভালো পাওয়া যায়। তাই আমাদের যে সমস্ত উদ্যোগী ও ভালো কৃষক আছে তারা প্রদশর্নীর মাধ্যমে ও ব্যক্তিগতভাবেও চাষ শুরু করেছে।
তিনি জানান, অল্প খরচে কৃষকেরা এ ফলের আবাদ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে কৃষকেরা যাতে আরও ব্যাপক পরিসরে এ জাতের তরমুজের আবাদে উদ্বুদ্ধ হন সেই লক্ষে আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি এবং পরামর্শ দিচ্ছি।