শিরোনাম

কুড়িগ্রাম, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): জেলায় শীতের শুরুতেই রাত্রীকালীন পিকনিক পার্টি, বনভোজন ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত শব্দযন্ত্র ব্যবহারে শব্দদূষনে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।
গ্রামাঞ্চল থেকে শুরু করে শহরের ভেতরেও রাতভর উচ্চশব্দে গানবাজনা চলছে অবাধে। যেন শব্দদূষণের ‘শব্দবোমা’ নেমে এসেছে পুরো জেলায়। আর এই অনিয়ন্ত্রিত শব্দ শিক্ষার্থীদের চলমান বার্ষিক পরীক্ষায় পড়াশোনায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। নিজেদের স্বাভাবিক ঘুম হারাচ্ছে শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ মানুষ।
এ অবস্থায় জনউপদ্রব বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসনের সরকারি ফেসবুক পেজ ‘ডিসি কুড়িগ্রাম’-এ এক সতর্কবার্তায় বিষয়টি জানানো হয়।
জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘আবাসিক এলাকা, হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে নির্ধারিত সীমার বেশি উচ্চশব্দ ব্যবহার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২৫ অনুযায়ী অতিরিক্ত শব্দ ব্যবহারের জন্য কারাদণ্ড, অর্থদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ড দেওয়ার বিধান রয়েছে।’
এছাড়া নির্ধারিত মাত্রার বেশি শব্দ উৎপাদনকারী মাইক, সাউন্ড সিস্টেম ও সাউন্ডবক্স ব্যবহার করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, চলমান পরীক্ষার সময় শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নজরদারি থাকবে।
জেলার মানুষ দীর্ঘদিন ধরেই রাতভর ‘চড়ুইভাতি’, ডিজে পার্টি, ওয়াজ মাহফিল ও বিভিন্ন পারিবারিক অনুষ্ঠানে উচ্চ শব্দে গানবাজনার কারণে অতিষ্ঠ।
কুড়িগ্রাম নতুন শহর এলাকার শাওন নামের এক বাসিন্দা বলেন,‘চড়ুইভাতির নামে রাতভর উচ্চমাত্রার শব্দ যে কতটা যন্ত্রণাদায়ক, তা ভুক্তভোগীরাই জানে। কিন্তু রাজনৈতিক চাপে অনেকে মুখ খুলতে সাহস পায় না। দ্রুত আইনের প্রয়োগ চাই।’
জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের দোয়ালী পাড়ার রেজাউল করিম রেজা বলেন,
‘ওয়াজ মাহফিলের বিরুদ্ধে নই। তবে শব্দ যেন শুধুমাত্র মাহফিলের ভেতরে সীমাবদ্ধ থাকে। মানুষকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।’
রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ডাংরারহাট গ্রামের আবুল কালাম আজাদ মন্তব্য করেন,‘শুধু ফেসবুকে পোস্ট করলে হবে না, বাস্তবে কাজ করতে হবে।’
জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ বলেন, ‘আমরা সবার সহযোগিতা চাই। সহযোগিতা পেলে শব্দদূষণমুক্ত, পরিবেশবান্ধব কুড়িগ্রাম গড়া সহজ হবে।’
জেলা উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, নাগরিকরা আশা করছেন, প্রশাসনের এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, জনস্বাস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবনযাপন ফিরে পাবে তার সুরক্ষা।
জেলাবাসীর একটাই চাওয়া,রাত হোক শান্ত, পরিবেশ হোক শব্দদূষণমুক্ত।