বাসস
  ০৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:২০

দেবীদ্বারে হানাদারমুক্ত দিবসে স্মৃতিচারণ ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা

শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ পালন করা হয়েছে দেবীদ্বার হানাদারমুক্ত দিবস। ছবি: বাসস

কুমিল্লা, ৪ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): শোভাযাত্রা, স্মৃতিচারণ ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ পালন করা হয়েছে দেবীদ্বার হানাদারমুক্ত দিবস।

১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে ৪ ডিসেম্বর দিনটি কুমিল্লার দেবীদ্বারবাসীর জন্য এক অনন্য স্মৃতিবিজড়িত অধ্যায়। এদিন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় দেবীদ্বার।

উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে দিবসটি উপলক্ষে শোভাযাত্রা ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

দিবসের শুরুতে সকালে উপজেলা চত্বর থেকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে ‘স্বাধীনতা স্তম্ভ’ ও ‘গণকবর’-এ শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন, উপজেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, উপজেলা প্রেসক্লাব, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং স্থানীয় গুণীজনেরা।

উপজেলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত স্মৃতিচারণ ও আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাকিবুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের জাতিসত্তার মূল ভিত্তি। এই চেতনা লালন করেই দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়তে হবে।’

সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন, দেবীদ্বার উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক এবিএম আতিকুর রহমান বাশার।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দেওয়ার মো. জাহাঙ্গীরের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন, উপজেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মূন্সী আব্দুর রৌফ, সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আব্দুস সামাদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সফিউল্লাহ মাস্টার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিনসহ অনেকে।

বক্তারা জানান, মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রহরে কুমিল্লা অঞ্চল ছিল অত্যন্ত কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ময়নামতি ক্যান্টনমেন্টের নিকটবর্তী হওয়ায় দেবীদ্বারসহ আশপাশের এলাকা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কঠিন ও ঝুঁকিপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র। তবুও মুক্তযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে আনেন।

তারা আরও জানান, ১৯৭১ সালের ৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ বাহিনী দেবীদ্বারের বিভিন্ন অংশে অগ্রসর হতে থাকে। এদিন মুক্তিযোদ্ধারা কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ সেতু মাইন বিস্ফোরণে ধ্বংস করে দেন। পরে মিত্রবাহিনীর ২৩ মাউন্টেন ডিভিশনের জেনারেল আর. ডি. হিরার নেতৃত্বে ট্যাংক বহর দেবীদ্বারে প্রবেশ করলে পাক হানাদার বাহিনী রাতের অন্ধকারে এলাকা ত্যাগ করে পালিয়ে যায়।

ফলে দেবীদ্বারের আকাশে উত্তোলিত হয় স্বাধীন বাংলার পতাকা, আর বিজয়ের উচ্ছ্বাসে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো উপজেলা।