বাসস
  ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:০০

রাজশাহীতে গ্রাম আদালতের মাধ্যমে ৫ হাজার ৯৬৫ মামলার নিষ্পত্তি

মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা শীর্ষক মতবিনিময় অনুষ্ঠিত। ছবি: বাসস

রাজশাহী, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : গ্রাম আদালত কার্যকরভাবে পরিচালিত হলে উচ্চ আদালতের ওপর থেকে মামলা জট কমবে এবং বিচার প্রার্থীরা স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে সঠিক বিচার পেতে সক্ষম হবেন। 

এখানে সর্বোচ্চ ১২০ দিনের মধ্যেই অভিযোগের নিষ্পত্তি করা হয়। ফলে দীর্ঘসূত্রতা ও অযথা ভোগান্তি থেকে প্রান্তিক জনগণ মুক্তি পাবেন। এক্ষেত্রে গ্রাম আদালতকে আরও জনপ্রিয় করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অপরিহার্য।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে গ্রাম আদালত ব্যবস্থা শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব মতামত তুলে ধরেন বক্তারা। সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্প।

মতবিনিময় সভায় জানানো হয়েছে, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলার ৯টি উপজেলার ৭২টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে কাজ করছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জেলায় ৬ হাজার ১৬৬টি মামলা দায়ের হয়েছে। এর মধ্যে ৫ হাজার ৯৬৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। নারী মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এক হাজার ৬৫১টি। 

আরও জানানো হয় এই প্রকল্পের আওতায় ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে ৭ কোটি ৬৩ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯৩ টাকা এবং প্রায় এক হাজার ৫৭ শতক জমি পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। এই জমির আনুমানিক মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি ২ লাখ টাকা। এই আদালত অনধিক তিন লাখ টাকা মূল্যমানের ফৌজদারি ও দেওয়ানি বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার বলেন, দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যাতে কম সময় ও কম খরচে তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে পারে, সে জন্য গ্রাম আদালতের বিকল্প নেই। গণমাধ্যমের ইতিবাচক প্রচারণা এ বিষয়ে জনগণকে আরও সচেতন ও উৎসাহিত করবে।

তিনি আরও বলেন, গ্রাম আদালতকে আরও শক্তিশালী করতে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। গ্রাম আদালত সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেলে বিচার প্রক্রিয়া সহজ হবে, মামলা জট কমবে এবং জনগণ দ্রুত ন্যায়বিচার পাবে— যা সরকারের ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক মো. জাকিউল ইসলাম। তিনি বলেন, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছোটখাটো অপরাধ বা বিরোধের ঘটনাই বেশি ঘটে। এগুলো গ্রাম আদালতের এখতিয়ারভুক্ত হলেও সচেতনতার অভাবে অনেকে থানা বা জেলা আদালতে দৌড়ান, এতে সময় ও অর্থ দুই-ই অপচয় হয়। গণমাধ্যম এসব বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

গ্রাম আদালত প্রকল্পের জেলা ব্যবস্থাপক মো. লুৎফর রহমান বলেন, গণমাধ্যম ধারাবাহিকভাবে ইতিবাচক সংবাদ প্রচার করলে গ্রাম আদালতের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে।

এ সময় গ্রাম আদালতের কার্যক্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন, প্রকল্পের জাতীয় প্রকল্প সমন্বয়ক বিভাষ চক্রবর্তী। গ্রাম আদালত ব্যবস্থার আইনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রকল্পের লিগ্যাল এনালিষ্ট এ্যাড. মশিউর রহমান চৌধুরী। 

আরও বক্তব্য দেন ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের প্রজেক্ট কো-অডিনেটর মারুফ আহমেদ। সভায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যে বক্তব্য দেন- আমাদের রাজশাহী পত্রিকার সম্পাদক আফজাল হোসেন, নতুন প্রভাত পত্রিকার সম্পাদক সোহেল মাহবুব, সাংবাদিক আবরার শাইর, সিনিয়র সাংবাদিক আইনুল হক, সাংবাদিক ওমর ফারুক , রাজিব হোসেন, ডালিম হোসেনসহ অন্যান্য সিনিয়র সাংবাদিক।