শিরোনাম

শফিকুল ইসলাম বেবু
কুড়িগ্রাম, ১ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): বাংলার ঋতু বৈচিত্র্যের ধারাবাহিকতায় এখনও হেমন্তকাল। বার্ষিক দিনলিপি অনুযায়ী শীত আসতে আরো পনেরো দিন বাকি। কিন্তু এই মধ্য অগ্রহায়ণেই জেলায় শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। আজ ভোরে ১৩.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ঘর থেকে বের হওয়াই কষ্টকর হয়ে পড়ে। শীতে জবুথবু মানুষ প্রকৃতির সাথে মানিয়ে চলার চেষ্টা করছে। শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে হতদরিদ্র মানুষ। আর চরবাসীর জন্য শীত যেন এক অভিশাপ।
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন ভোরে শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। সূর্য উঠলেও শীত কমতে সময় লাগে।
সকাল ১০টার পর থেকে আস্তে আস্তে শীতের মাত্রা সামান্য কমে। আবার বিকেল হতে না হতেই রোদ স্তিমিত হয়ে আসে। উত্তর থেকে ধেয়ে আসে হিমেল বাতাস। নেমে আসে শীত। সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কমে যেতেই ঠান্ডা বাড়ে। যেন মাঘের শীত। অথচ পৌষ আসতে আরও পনেরো দিন।
রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের তথ্যমতে, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় জেলার চরাঞ্চলসহ সর্বত্র শীতের প্রভাব স্পষ্টভাবে অনুভূত হচ্ছে।
১৬টি নদ-নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন ৪৬৯টি চরে বসবাসকারী সাড়ে পাঁচ লাখ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বৃদ্ধ ও শিশুরা। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্রের অভাবে অধিকাংশ পরিবারই তীব্র শীত সহ্য করতে হিমশিম খাচ্ছে।
প্রচণ্ড কুয়াশার কারণে সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলছে ধীর গতিতে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। অন্যদিকে ঘন কুয়াশা ও শীতের তীব্রতায় মাঠে গিয়ে স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না কৃষি শ্রমিকরা। এতে কৃষিকাজ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কাও দেখা দিয়েছে।
রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুল মালেক বলেন,‘শীতটা খুব বেশি পড়ছে। ঘরে বাচ্চাদের জন্য গরম কাপড়ের অভাব রয়েছে। রাত জেগে একটা কম্বল দিয়ে কোনো রকমে ঠান্ডা সামলাই।’
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বলদি পাড়া গ্রামের হামিদা বেগম বলেন, আমরা নদীর চরেই থাকি।
বাতাস তো এমনিই বেশি। শীত নামার পর থেকে হাঁটাচলা পর্যন্ত কষ্ট হয়ে গেছে।
রৌমারীর কৃষি শ্রমিক রবিউল ইসলাম বাসসকে বলেন, সকালে মাঠে যাওয়ার মতো অবস্থা থাকে না। কুয়াশায় হাত-পা জমে আসে। কাজ না করতে পারলে পরিবার চালানো কঠিন।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন অগ্রহায়ণ মাস। তাই শীতে মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে। পৌষ-মাঘ মাসে তাপমাত্রা আরও কমবে।
তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হবে। তাই এখনই শীতার্ত মানুষের জন্য জরুরি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
কুড়িগ্রাম জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল মতিন জানান, জেলার ৯টি উপজেলায় ৫৪ লাখ টাকার শীত বস্ত্র কেনার জন্য বরাদ্দ পেয়েছি। স্থানীয়ভাবে শীত বস্ত্র কিনে দ্রুততম সময়ে শীতার্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হবে।