বাসস
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:১২
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৮

শিক্ষকদের কল্যাণ ও অবসর সুবিধার অর্থ না পাওয়া অমানবিক : শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার ফরিদপুর সদর উপজেলা মিলনায়তনে এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ছবি: বাসস

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সি আর আবরার বলেছেন, শিক্ষকদের কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধার অর্থ না পাওয়া অমানবিক। এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এই সমস্যা সমাধানে ইতোমধ্যে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, হিসাবপত্র হালনাগাদ ও সরকারের অতিরিক্ত বরাদ্দ নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। 

ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে সম্প্রতি ফরিদপুর সদর উপজেলা মিলনায়তনে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষা-অংশীজনদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় শিক্ষা উপদেষ্টা আশা প্রকাশ করেন যে অল্প সময়ের মধ্যেই বকেয়া অর্থের নিষ্পত্তি শুরু হবে।

ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার শতাধিক শিক্ষক এই সংলাপ অনুষ্ঠানে অংশ নেন।

সেমিনারে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ছিলেন— দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন— মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক বি.এম. আব্দুল হান্নান।

এতে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান মোল্যা।  

মঞ্চে এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, অতিথিবৃন্দ ও বিশিষ্ট নাগরিক উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ড. আবরার বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে সরকার দেশব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ পরিচালনা করছে। আজকের আলোচনায় উত্থাপিত প্রস্তাব ও উদ্বেগ আমাদের নীতি প্রণয়নে মূল্যবান দিকনির্দেশনা দেবে।’

গুণগত শিক্ষার জন্য সামগ্রিক সংস্কারের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষকতার মর্যাদা ও পেশাগত উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ চলছে। জাল সনদ, নোটবই নির্ভরতা ও প্রাইভেট টিউশনসহ দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে বিশেষ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পাঠাগার পুনরুজ্জীবন, ছাত্র মূল্যায়ন ব্যবস্থার পুনর্গঠন ও শিক্ষকদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

পাবলিক ও প্রাইভেট শিক্ষার মানের বৈষম্য কমাতে সরকার কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানান শিক্ষা উপদেষ্টা।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পরিবেশকে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত রাখতে হবে। যারা রাজনীতি করতে চান, তারা রাজনীতিতেই যুক্ত হোন। কিন্তু শ্রেণিকক্ষের নিরপেক্ষতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। শিক্ষা ও রাজনীতির অনাকাঙ্ক্ষিত সংমিশ্রণ বহু প্রতিষ্ঠানকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।’

গত সপ্তাহে কলেজ পর্যায়ে ১ হাজার ৮০০ জনের বেশি শিক্ষককে লেকচারার থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে প্রমোশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এটি কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকার। ভবিষ্যতেও প্রমোশনের স্থবিরতা দূর করা হবে।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় প্রকৃত নম্বর প্রদানের নীতি অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি ।

তিনি আরো বলেন, ‘যোগ্যতার সঠিক মূল্যায়ন ছাড়া শিক্ষার মানোন্নয়ন অসম্ভব। তাই নম্বর বাড়ানোর সংস্কৃতি কখনোই ফিরে আসবে না।’

দেশের বর্তমান সংবেদনশীল প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে ড. আবরার বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি। বিচার, সংস্কার ও স্বচ্ছ নির্বাচন — এই তিন অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। নাগরিকের অধিকার ও প্রজাতন্ত্রের মর্যাদা পুনঃস্থাপনই নতুন বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।’

শিক্ষা উপদেষ্টা উপস্থিত সকল শিক্ষক ও অংশীজনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন,  লিখিত মতামত আগামী তিন দিনের মধ্যে জমা দিলে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই আলোচনাকে নীতিগত সিদ্ধান্তে রূপ দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ফরিদপুরকে নিজের জন্মভূমি উল্লেখ করে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে বিশেষ আবেগ অনুভব করেন এবং সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।