বাসস
  ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ২২:১৪

চট্টগ্রামের ৮ আসনে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস

চট্টগ্রাম, ৫ জানুয়ারি ২০২৪ (বাসস) :  চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের মধ্যে ৮ টিতে জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। চারটি আসনের প্রার্থীরা বেশ নির্ভার হলেও বাকী চারটি নিয়ে কিছুটা সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।
আজ সকাল ৮ টায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণাশেষে চট্টগ্রামের ১৬ আসনের ভোটার, সেখানকার কর্মরত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য মিলছে।
তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই), চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি),  চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ), চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর), চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া), চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ), চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) ও চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস পাওয়া যায়।
অনেকটা নির্ভার আছেন : চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, চট্টগ্রাম-১১ (পতেঙ্গা-বন্দর) আসনে নৌকার প্রার্থী এমএ লতিফ এমপি এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।
কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) আসনে নৌকার প্রার্থী মাহফুজুর রহমান মিতা, চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকু-) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসএম আল মামুন, চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে।
চট্টগ্রামে এবার তীব্র উত্তেজনাপূর্ণ আসন পটিয়া। হামলা, ভাঙচুর প্রায় প্রতিদিনই ঘটেছে, পাল্টাপাল্টি বহু অভিযোগ ইতিমধ্যে জমা পড়েছে ইসি’তে। এখানে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরীকে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না দেয়ায় তিনি স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী হুইপ সামশুল হক চৌধুরী বিগত ১৫ বছর পটিয়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- করেছেন। পক্ষান্তরে দলের ত্যাগী নেতা ও ভদ্রলোক হিসেবে মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচ্ছন্ন ইমেজ আছে। আওয়ামী লীগের প্রায় সকল নেতাকর্মী ইতোমধ্যে মোতাহেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ আসনে নৌকা’র সাথে ঈগল-এর তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে।
নির্বাচনকে ঘিরে বাঁশখালী আসনেও এবার শুরু থেকেই কঠিন লড়াইয়ের আভাস মিলছে। এখানে আওয়ামী লীগ বর্তমান সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর হাতে নৌকা প্রতীক দিলেও দলের প্রভাবশালী দুই নেতা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন নির্বাচন করছেন। ফলে এখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন। এখন অপেক্ষায় থাকতে হবে সাধারণ ভোটাররা শেষ মুহূর্তে মোস্তাফিজের নৌকা, মুজিবের ঈগল নাকি লিটনের ট্রাকের প্রতি ঝুঁকছেন।
দাঙ্গা-হাঙ্গামা না হলেও বোয়ালখালী-চান্দগাঁও-পাঁচলাইশ আসনটিও এবার পুরো চট্টগ্রামের নজর কেড়েছে। ৭ জানুয়ারি এখানে নাটকীয় যেকোনো ফলাফল আসতে পারে।  এ আসনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সোলায়মান আলম শেঠকে আওয়ামী লীগ ছাড় দিয়েছে - এমন প্রচার বেশ চাউর ছিল। কিন্ত নগর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)-এর সাবেক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এবং সাবেক কাউন্সিলর ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা বিজয় কুমার চৌধুরী স্বতন্ত্র হিসেবে প্রথম থেকেই সরব থাকায় লাঙ্গল পিছিয়ে পড়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রকাশ্যে ছালামের কেটলির পক্ষে প্রচারণায় নেমেছেন। প্রভাবশালী কয়েকজন নেতা বিজয় কুমার চৌধুরীর ফুলকপি’র প্রতি তাঁদের সমর্থন অব্যাহত রেখেছেন। ফলে ‘ছেড়ে দেয়া’ আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেঠ বসতে পারবেন কি না সন্দেহ নির্বাচনী এলাকার ভোটারদের।  
মিরসরাই আসনে সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন দীর্ঘদিন এমপি হয়ে এসেছেন। এবার তিনি প্রার্থী না হওয়ায় তাঁর পুত্র মাহবুব উর রহমান রুহেলকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেয়। কিন্তু  স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ঈগল প্রতীকের গিয়াস উদ্দিনের তৃণমূল পর্যায়ে যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের দীর্ঘদিনের ইমেজ রুহেলের ক্ষেত্রে কতটুকু প্রভাব ফেলতে পারবে তা সময়েই বলে দেবে।
নাটকীয় আসন ফটিকছড়িও। নজিবুল বশর মাইজভা-ারী এ আসনে ৩ বার আওয়ামী লীগের সমর্থনে জিতেছেন। এবারও তিনি এমন প্রত্যাশায় ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সাবেক সাংসদ রফিকুল আনোয়ারের কন্যা ও সংরক্ষিত আসনের বর্তমান সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে মনোনয়ন দেয়। অন্যদিকে, সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মুহাম্মদ আবু তৈয়ব প্রার্থী হওয়ায় এখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগও অনেকটা বিভক্ত। মাঝে একবার বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির চেয়ারম্যান সাইফুদ্দিন আহম্মদ মাইজভা-ারীকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দেয়ার কথা বললেও পুনরায় সনির পক্ষেই সমর্থন ব্যক্ত করে। এ জটিল সমীকরণে নজিবুল বশর মাইজভা-ারী গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর এবং নৌকার প্রতি সমর্থন জানানোর ঘোষণা দিলে নাটকীয়তা তুঙ্গে ওঠে। এখন দ্বিমুখী-ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত মিলছে ফটিকছড়িতে।
চট্টগ্রাম-১০ (খুলশী, পাহাড়তলী, হালিশহর) আসনে কয়েক মাস আগে উপ-নির্বাচনে জিতে আসা মহিউদ্দিন বাচ্চু এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। কিন্তু এক সময়ে যুবলীগে তাঁরই সহযোদ্ধা ফরিদ মাহমুদ চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে মাঠে সরব থাকায় মহিউদ্দিন বাচ্চুর ভোটে ভাগ বসাতে পারেন। সুবিধাটা পুরোপুরি নিতে কোমর বেঁধে নেমেছেন এ আসনের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী, সাবেক সিটি মেয়র আলহাজ মোহাম্মদ মনজুর আলম।
চন্দনাইশ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মো. নজরুল ইসলামী চৌধুরী এমপির গলার কাঁটা হতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জব্বার চৌধুরী। সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ মানতে পারেনি। এখানে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় পর্যায়ের বহু নেতা-কর্মী তাঁর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়