বাসস
  ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৪৪

পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নতুন অভিযান শুরু

ঢাকা, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইসরাইলের সেনাবাহিনী বুধবার নতুন করে অভিযান শুরু করেছে। স্থানীয় গভর্নর এএফপিকে জানিয়েছেন, সেনারা বেশ কয়েকটি শহরে অভিযান চালিয়েছে।

ফিলিস্তিনের তুবাস থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

সেনাবাহিনী, পুলিশ ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থা যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা উত্তরাঞ্চলে ‘বৃহৎ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান’ শুরু করেছে। গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী সেখানে ‘সন্ত্রাসীরা ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা’ হচ্ছিল।

সেনারা জানিয়েছে, প্রথমে বিমান হামলার মাধ্যমে অভিযানটি শুরু হয়। এরপর স্থল অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও অর্থ জব্দ করা হয়।

সেনারা দাবি করেছে, জেনিন গভর্নরেটের কাবাতিয়া এলাকায় অভিযান চালানোর সময়, ইসরাইলি সৈন্যদের লক্ষ্য করে এক ব্যক্তি বিস্ফোরক নিক্ষেপ করলে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী এটিকে নতুন অভিযান বলে এএফপিকে নিশ্চিত করেছে। জানুয়ারি ২০২৫-এ শুরু হওয়া অভিযানের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। আগের অভিযান মূলত পশ্চিম তীরের উত্তরাঞ্চলের শরণার্থী শিবিরে পরিচালিত হয়েছিল।

ইসরাইল ১৯৬৭ সাল থেকে পশ্চিম তীর দখল করে রেখেছে।

অভিযানটি শুরু হয় রাত থেকে। পশ্চিম তীরের ১১টি গভর্নরেটের মধ্যে উত্তর-পূর্বতম কৃষিপ্রধান তুবাস অঞ্চলে অভিযানটি চলছে।

টুবাসের গভর্নর আহমেদ আল-আসাদ এএফপিকে বলেন, ‘এই প্রথম পুরো গভর্নরেটকে অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে।’

তিনি জানান, সেনারা তাম্মুন ও তায়াসির শহর এবং আল-ফারা শরণার্থী শিবিরে অভিযান চালিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘সেনারা শহরের প্রবেশপথগুলো মাটির বাঁধ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। তাই, কোনো ধরনের চলাচল নেই।’

আসাদ জানান, অভিযানে একটি অ্যাপাচি হেলিকপ্টার ব্যবহার করা হয়েছে, যা আবাসিক এলাকার দিকে গুলি ছুড়েছে। 

তার ভাষায়, ‘এটি রাজনৈতিক অভিযান, নিরাপত্তাজনিত নয়।’

এক এএফপি ফটোগ্রাফার জানিয়েছেন, তুবাস শহরে সেনারা টহল ও কয়েকটি সাঁজোয়া গাড়ি চলাচল করছিল। আকাশে নজরদারি ড্রোন ঘুরছিল। বেশিরভাগ দোকান বন্ধ ছিল।

তাম্মুন শহরের প্রবেশপথ একটি সামরিক গাড়ি দিয়ে বন্ধ করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সকে যেতে দেওয়া হলেও সাধারণ মানুষকে আটকানো হয়।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ১০ জন আহতকে চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে নিতে হয়েছে।

সংস্থাটি অভিযোগ করেছে, তুবাস ও তাম্মুনে রোগী পরিবহনে তাদের দলকে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা ‘ওসিএইচএ’ বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, ওই এলাকায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেনাদের দখলদারির কারণে অন্তত দুই ডজন পরিবারকে ঘর ছাড়তে হয়েছে।

হামাস ও ইসলামিক জিহাদ অভিযানের নিন্দা জানিয়েছে। হামাস বলেছে, এটি পশ্চিম তীরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার নীতি।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পর থেকে পশ্চিম তীরে সহিংসতা বেড়েছে। গত মাসে ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়া সত্ত্বেও এই সহিংসতা থামেনি।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা যুদ্ধ শুরুর পর থেকে পশ্চিম তীরে ইসরাইলি সেনা ও বসতি স্থাপনকারীদের হাতে ১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই যোদ্ধা, তবে সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন।

অন্যদিকে, ইসরাইলি সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অন্তত ৪৪ জন ইসরাইলি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে সেনা ও সাধারণ নাগরিক উভয়ই রয়েছে।