বাসস
  ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৩৫

কুমিল্লায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দুপুরের পর সবাই ছিল বিজয়ের আনন্দে উল্লাসিত

॥ কামাল আতাতুর্ক মিসেল ॥
কুমিল্লা  (দক্ষিণ), ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ (বাসস) : একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর, দিনটি ছিল বৃহস্পতিবার। ১৬ ডিসেম্বর কেমন ছিল কুমিল্লা ? বিজয় রোমন্থনে সেদিনের বীর নায়কদের স্মধতিচারণ ও পত্রিকার পাতা থেকে উঠে এসেছে সেই রোমাঞ্চগাঁথা। কুমিল্লায় সেদিন দুপুরের পর বিজয়ের আনন্দে উল্লাসিত ছিল সবাই। সাধারণ মানুষ বিজয় আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠে ওই দিনটি। মুক্তিযোদ্ধাদের জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে।
কুমিল্লার প্রাচীনতম দুটি পত্রিকা গেঠে জানা যায়, মুক্তির অপেক্ষায় পৌষের কনকনে শীতে ১৫ ডিসেম্বর ছিল চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে ছিল কী হবে ১৬ ডিসেম্বর। পৌষের সোনালি রোদ মাখা সেই দিন কি বাংলায় আবার ফিরে আসবে! বাঙালির স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন কি আজ পূর্ণতা পাবে- কখন আসবে চূড়ান্ত সোনালি বিজয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণটি! নাকি অন্য কিছু ঘটবে! মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী হানাদার পাকিস্তানিদের ওপর চূড়ান্ত আঘাত হেনে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য শুধু একটি নির্দেশের অপেক্ষায় চারিদিক দিয়ে ঢাকাকে ঘেরাও করে রেখেছে- হানাদার পাকিস্তানিদের পালাবার কোন পথ নেই- সারেন্ডার করো না হয় চূড়ান্ত আঘাত প্রতিহত করার জন্য তৈরি হও। তবে সারেন্ডারের চেয়ে মুক্তিবাহিনী চাচ্ছে শেষ যুদ্ধ করে হানাদার পাকিস্তানিদের একটা চরম আঘাত দিয়ে প্রতিশোধ নেওয়া।
কুমিল্লা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিউল আহমেদ বাবুল বাসসকে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এসেছিল আমাদের বিজয়ের মুহূর্ত। এক সাগর রক্ত পেরিয়ে এসেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ৯ মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন ছিল বিপুল আনন্দের।  তবে এই আনন্দের পেছনে ছিল মানুষের আত্মত্যাগের অঢেল কাহিনি। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের পর বাংলাদেশের বিজয়ের সংবাদ যখন প্রকাশিত হচ্ছিল পত্রপত্রিকায়, সেই সময় বিজয়ের আনন্দের মধ্যে এই সব আত্মদানের গল্পগুলোও ফিরেছিল মানুষের মুখে মুখে।
মুক্তিযুদ্ধের নানামাত্রিক খবর তৎকালীন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। সেই সময় অবরুদ্ধ দেশের সংবাদপত্র এবং ভারত ও অন্যান্য দেশের খবরের কাগজ ভরে উঠত মুক্তিযুদ্ধের নানান খবরে। এমনকি বাংলাদেশের সংগ্রামী তরুণ, রাজনৈতিক নেতারা ভারতের সীমান্তবর্তী রাজ্য থেকে পত্রিকা প্রকাশ করে শক্রকবলিত দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন, তাতে গঠিত হয়েছে জনমত। এভাবে মুক্তিসংগ্রাম এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে।
কিন্তু কেমন ছিল বিজয়ের আনন্দ-সংবাদ? মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের সংবাদে মানুষ কীভাবে উদ্বেলিত হয়েছিল, কেমন করে গ্রহণ করেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণকে? একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী পত্রপত্রিকাগুলোর সংবাদ-প্রতিবেদনে বিষয়টি শিল্পিতরূপে ধৃত হয়েছিল। কুমিল্লা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক আমোদ থেকে পাওয়া যায় ঢাকার বাইরে মফস্বলের শক্রমুক্তির খবর এবং মানুষের আনন্দের চিত্র। কুমিল্লা মুক্ত হয়েছিল ৮ ডিসেম্বর। বাংলার বিভিন্ন এলাকার সহিত কুমিল্লাও শত্রুমুক্ত ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশিত এই সংবাদে বলা হয়, গত ৮ই ডিসেম্বর বুধবার প্রত্যুষে শহরবাসী কুমিল্লা শহরকেও যেন হালকা, স্বচ্ছ ও পবিত্র বলিয়া দেখিতে পায়। এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই জানিতে পারে কুমিল্লা শহর শক্রমুক্ত এবং মুক্তি ও মিত্র বাহিনী কুমিল্লা শহরে পৌঁছিতেছে। এই আনন্দে জনগণ আনন্দ উল্লাসে একে অন্যের সহিত আলিঙ্গন ও জয়বাংলা ধ্বনি দিতে থাকে। ৭ ডিসেম্বর রাতে কুমিল্লা বিমানবন্দরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সঙ্গে পাকিস্তানি বাহিনীর সংঘর্ষ হয় এবং পরাস্ত হয় পাকিস্তানিরা। অনেক মৃত সৈনিক পড়ে থাকে এখানে-সেখানে। ১৬ ডিসেম্বরে কুমিল্লার আমোদ পত্রিকায় ‘বিমানবন্দরে জয়োল্লাস’-এ সম্পর্কে বলা হয়, ‘এই দৃশ্য (পাকিস্তানিরা মরে পড়ে আছে) দেখিবার জন্য হাজার হাজার বাঙ্গালী জনতা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইয়া বিজয় উল্লাসে মিত্রবাহিনীর সৈনিক দিগকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে, সেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত পাঞ্জাবী সৈনিকদের প্রতি ধিক্কার জানাইতে থাকে। বাঙ্গালী জনতার এই আনন্দ উল্লাস এবং মিত্রবাহিনীর প্রতি অভিনন্দনে তাহারা উপলব্ধি করে যে, খান সেনারা জনগণের প্রতি যে কতদূর অত্যাচার চালাইয়াছিল। কুমিল্লায় বিজয়ের আনন্দ ছিল আনন্দ ও বেদনার। একই সঙ্গে জিজ্ঞাসা জমেছিল অনেক বিষয়ে। ১৯৭১-এর বিজয়ের মাসে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায় এর পরিচয় মেলে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়