বাসস
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৩:০২

নির্বাচনকে সামনে রেখে ধীরগতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের আশাবাদ: জিইডি

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে আরও ভালো হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫- ২০২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রায় ৫ শতাংশ বাড়তে পারে। সেখানেও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার মূল ভিত্তি হিসেবে রেমিট্যান্স ও রপ্তানির কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে পোশাক রপ্তানি ও  দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে ।

পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) প্রকাশিত নতুন অর্থনৈতিক সংকলনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

জিইডি প্রকাশিত ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক-এর নভেম্বর ২০২৫ সংখ্যায় অর্থনীতির আশাবাদী চিত্র তুলে ধরা হলেও গভীর কাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক পালাবদল অর্থনীতির গতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।

বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা স্পষ্ট হলে এবং নতুন সরকার ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ উন্নয়ন, ব্যাংকিং খাত স্থিতিশীলতা, আর্থিক শৃঙ্খলা ও জ্বালানি নিরাপত্তায় দীর্ঘদিনের স্থগিত থাকা সংস্কারগুলো বাস্তবায়নে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিলে অর্থনীতি ফের গতিশীলতা পাবে। এধরনের সংস্কার ছাড়া বর্তমানের পুনরুদ্ধার অবস্থা স্বল্পস্থায়ী হতে পারে।

এডিবির পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশ হতে পারে, যেখানে রেমিট্যান্স ও পোশাক রপ্তানি বড় অবদান রাখছে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়ায় বিনিয়োগকারী ও উদ্যোক্তারা আপাতত বিনিয়োগ করছেন না। নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিতে সময় নিচ্ছেন এবং সঠিক সময়ের অপেক্ষা করছেন। 

নির্বাচনকালীন ব্যয় ও রাজনৈতিক পালাবদলের সময়ে সৃষ্ট সম্ভাব্য অস্থিরতা মুল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যা স্থিতিশীলতা ফেরানোর প্রচেষ্টাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলেও সতর্ক করা হয়েছে।

অক্টোবর ২০২৫-এ সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি আগের বছরের চেয়ে ১০.৮৭ শতাংশ থেকে কমে ৮.১৭ শতাংশ হয়েছে। এটি মূলত খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি কমে যাওয়ার কারণে হয়েছে। আমন ধান কাটা, আমদানি এবং সরকারি সংগ্রহের কারণে চালের সরবরাহ বাড়ায় খাদ্য মূল্যস্ফীতি অক্টোবর ২০২৪-এর ১২.৬৬ শতাংশ থেকে কমে অক্টোবর ২০২৫-এ ৭.০৮ শতাংশে নেমে আসে।

তবে, খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.১৩ শতাংশে পৌঁছেছে। যা আবাসন, পরিবহন ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের চাপ অব্যাহত থাকার বিষয়টি নির্দেশ করে। 

আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে ব্যাংক আমানত প্রায় ডবল-ডিজিট হারে বৃদ্ধি পেলেও, বেসরকারি খাতে ঋণ নেওয়া ৬.২৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি গত চার বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন।

সুদের উচ্চহার, ব্যাংকের সতর্ক অবস্থান এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, সরকার সেপ্টেম্বরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ২৪.৪৫ শতাংশ বেশি ঋণ নিয়েছে। যা বেসরকারি ঋণগ্রহীতাদের জন্য চাপ তৈরি করেছে।

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার থেকে ৮ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা কম হয়েছে। অর্থাৎ লক্ষ্যের মাত্র ৭৭.৩৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আমদানি শুল্ক, ভ্যাট ও আয়করের মত প্রধান উৎসগুলো লক্ষ্যপূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

যদিও ২০২৪-এর অক্টোবরের তুলনায় রাজস্ব আদায় সামান্য বেশি হয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপ এবং সরকারি বাড়তি ব্যয়ের প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে মাত্র ২.২ শতাংশের বৃদ্ধিকে ‘হতাশাজনক’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

অক্টোবর পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৮.৩৩ শতাংশ। যদিও এটি গত বছরের ৭.৯০ শতাংশের তুলনায় অগ্রগতি। কম বরাদ্দ এবং নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় কমে যাওয়ার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি হচ্ছে।
কিছু ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে সামান্য উন্নতি হলেও মোট ব্যয় কমে গেছে। গত বছরের ৮ হাজার ৭৬২ কোটি টাকা থেকে এ বছর ৭ হাজার ৭২০ কোটি টাকায় নেমে এসেছে। 

তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে ২৪.৩৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে দাঁড়িয়েছে ৩২.৩৪ বিলিয়ন ডলারে। বিপিএম৬ রিজার্ভও বেড়েছে, যা রেমিট্যান্স বৃদ্ধি ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় সতর্কতার ফল।

২০২৫-২০২৬ অর্থবছররের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। প্রত্যেক মাসেই গত বছরের চেয়ে বেশি এবং সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ প্রবাহ রেকর্ড হয়েছে।

তবে, রপ্তানি আয়ের ওঠানামা অব্যাহত ছিল। জুলাই মাসে রপ্তানি ৪.৭৭ বিলিয়নে শীর্ষে পৌঁছালেও এপ্রিল ও জুনে বড় পতন দেখা গেছে। তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি এই উত্থান-পতনকে প্রতিফলিত করেছে। অনান্য রপ্তানি খাতও বছরের মাঝামাঝি সময়ে নিম্নমুখী ছিল।

রিয়েল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট (আরইইআর) উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে, যা রপ্তানি প্রতিযোগিতায় কমার ইঙ্গিত দেয়। 

প্রতিবেদনে আরও সতর্ক করা হয় যে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বৃহৎ আকারের ডলার ক্রয় যদি বন্ধ না করা হয় তবে তা মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিতে পারে এবং বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রক্রিয়াকে বিকৃত করতে পারে।