বাসস
  ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯:৩০

ক্ষমতায় এলে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণে অগ্রাধিকার দেবে বিএনপি: আমীর খসরু

আজ চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরামের ‘বাণিজ্য সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। ছবি: বাসস

চট্টগ্রাম, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসার সুযোগ পেলে রাজনৈতিক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ ও নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, আমরা এতদিন রাজনৈতিক গণতন্ত্রের কথা বলেছি। এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছি অর্থনীতির সব স্তরে গণতন্ত্রায়ণ নিশ্চিত করব। এর মূল লক্ষ্য হলো জনগণের সব শ্রেণি-পেশাকে মূলধারার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত করা এবং মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা।

আজ চট্টগ্রাম নগরীর একটি হোটেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাণিজ্য সংলাপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (সাবেক) সভাপতি প্রকৌশলী আলী আহমেদ। বাণিজ্য সংলাপে চট্টগ্রাম বিভাগভুক্ত বিভিন্ন জেলার বিনিয়োগকারী, শীর্ষস্থানীয় উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং বিপুল সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।

সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বক্তব্য ও পরবর্তী প্রশ্নোত্তর পর্বে অতীত ও বর্তমান সরকারের সময়কালের অর্থনৈতিক চিত্র তুলে ধরেন এবং টেকসই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনীতিকে গতিশীল করতে বিএনপির ভবিষ্যৎ নীতিকৌশল ব্যাখ্যা করেন।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রতিটি খাত অতিমাত্রায় নিয়ন্ত্রিত। বিএনপি ক্ষমতায় এলে ব্যবসা পরিচালনার সহজতা বাড়াতে ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচির আওতায় অর্থনীতিতে নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণ ও উদারীকরণ বাস্তবায়ন করা হবে। অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত ও রক্ষণশীল অর্থনৈতিক সংস্কৃতি সরকারি ও বেসরকারি খাতের কিছু অসাধু চক্রকে লাভবান করছে, যার ফলে ব্যবসার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। আমাদের আন্তরিক উদ্দেশ্য হলো— দুর্নীতিবাজ গোষ্ঠীর ক্ষমতা ভেঙে দিয়ে প্রকৃত ব্যবসায়ীদের হাতে অর্থনীতির নিয়ন্ত্রণ তুলে দেওয়া। রপ্তানি ও জিডিপির অনুপাতের বিদ্যমান ভারসাম্যহীনতা দূর করে অর্থনীতির প্রকৃত সক্ষমতা কাজে লাগাতে বিএনপি একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।

অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণমুক্ত করণের জন্য আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থেকে মুক্তি এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যৌক্তিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের সক্ষমতা ও পেশাদারিত্ব বাড়ানো ছাড়া উদার অর্থনীতির সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ কমাতে স্বয়ংক্রিয় (অটোমেশন) ব্যবস্থা চালু করা হবে, যা বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বন্দর দক্ষতা ও কাস্টমস কার্যক্রমের উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি আরো বলেন, দীর্ঘসূত্রতা ও সময়সাপেক্ষ বন্দর ও কাস্টমস প্রক্রিয়া অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রধান অন্তরায়। সব আমদানিকৃত কনটেইনার হাতে হাতে পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই। সফটওয়্যারের মাধ্যমে মাত্র ২ শতাংশ কনটেইনারের কায়িক পরীক্ষা করলেই যথেষ্ট। কোন কনটেইনার পরীক্ষা প্রয়োজন, তা সিস্টেম নিজেই নির্ধারণ করবে।

অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের অবদানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এসএমই খাতের কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি ছাড়া দেশের অর্থনীতির টেকসই ও প্রত্যাশিত উন্নয়ন অর্জন সম্ভব নয়।

এসএমই পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগের পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় এলে সব রপ্তানিমুখী খাতের জন্য বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা চালু করা হবে জানিয়ে আমীর খসরু বলেন, ‘রপ্তানি বাড়ানো, বৃহৎ পরিসরে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলে প্রবাসী আয় ২৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে না পারলে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি গড়ে তোলা সম্ভব নয়।’ এজন্য গণতান্ত্রিক ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেন তিনি।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সহ-সভাপতি এম এ সালাম, সাবেক পরিচালক আমীরুল হক ও সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি সেলিম রহমান, শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি জহিরুল ইসলাম চৌধুরী, সিএন্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর আবদুস সালাম, রাঙামাটি চেম্বারের সভাপতি মামুনুর রশিদ, চাঁদপুর চেম্বারের পরিচালক মানিকুর রহমান, বান্দরবান চেম্বারের পরিচালক জসিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জুনিয়র চেম্বারের সভাপতি জুনায়েত আহমেদ রাহাত, উইমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি সুলতানা নূর জাহান রোজী এবং বারভিডার সাবেক সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান প্রমুখ।