শিরোনাম

মুহাম্মদ নুরুজ্জামান
খুলনা, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস): চালুর অপেক্ষায় রয়েছে মোংলা পোর্ট উন্নয়ন প্রকল্প পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি (পিআরএফ)। এ প্রকল্প চালু হলে জাহাজ থেকে তেল সংগ্রহ এবং অপসারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং নদী ও সামুদ্রিক জীবনচক্র রক্ষা করবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এটি রাজশাহী, রংপুর এবং বরিশাল বিভাগের সাথে সড়ক, নদী এবং রেলপথের মাধ্যমে উন্নত সংযোগ প্রদান করছে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক জীবনরেখা হিসেবে মোংলা বন্দর খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, গাড়ি, যন্ত্রপাতি, চাল, গম, কয়লা, জ্বালানি তেল, পাথর, ভুট্টা, তৈলবীজ এবং এলপিজি আমদানি করছে। অন্যদিকে হিমায়িত মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া, পাট ও পাটজাত পণ্য, মাটি, টাইলস, রেশম বস্ত্র এবং সাধারণ পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।
একটি বিশ্বমানের, আধুনিক ও নিরাপদ বন্দর ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য, বন্দরের আধুনিকীকরণ এবং পরিচালনা ক্ষমতা বৃদ্ধি, চ্যানেলের নাব্যতা নিশ্চিতকরণ, পণ্য সম্ভার ও কন্টেইনার সংরক্ষণ সুবিধা সম্প্রসারণ, আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহ এবং নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে কাজ করছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের (এমপিএ) সিনিয়র উপ-পরিচালক (জনসংযোগ) মো. মাকরুজ্জামান বাসসকে বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোংলা বন্দর সকল প্রধান পরিচালন ও আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। ৮.৮৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং-এর বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বন্দরটি ১০.৪১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন হ্যান্ডলিং করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১.৫৩২ মিলিয়ন টন বা ১৭.২৫ শতাংশ বেশি। একই অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০,০০০ টিইইউ। এ সময় বন্দরটি ২১,৪৫৬ টিইইউ হ্যান্ডলিং করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ১,৪৫৬ টিইইউ বা ৭.২৮ শতাংশ অতিক্রম করেছে।
তিনি জানান, মোংলা বন্দর তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রাও অতিক্রম করেছে। বার্ষিক রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ৩৩৩.৮৭ কোটি টাকার বিপরীতে ৩৪৩.৩০ কোটি টাকা আয় করেছে। যা ৯.৪৬ কোটি টাকা বা ২.৮৩ শতাংশ বেশি। এ বন্দরের নিট মুনাফাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০.৪৬ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বন্দরটি ৬২.১০ কোটি টাকা অর্জন করেছে। যা লক্ষ্যমাত্রার ৪১.৬৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে ২০৩.৪৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্দর কর্মকর্তারা জানান, আধুনিক সরঞ্জাম সংগ্রহের ফলে প্রতি ঘন্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার পরিচালনা সম্ভব হয়েছে। জেটির সামনে নিয়মিত ড্রেজিংয়ের ফলে নাব্যতা নিশ্চিত হয়েছে। যার ফলে পাঁচটি জেটিতে একই সাথে পাঁচটি জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে মোংলা বন্দরে ৩৫৬টি পণ্যবাহী জাহাজ নোঙর করেছে। এ থেকে ১৩,৮৫৪ টিইইউ কন্টেইনার পরিচালনা করেছে, ৪,১৩৯টি আমদানিকৃত যানবাহন প্রক্রিয়াজাত করেছে এবং ৪.৪ মিলিয়ন টন আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিচালনা করেছে।
বন্দর কর্মকর্তা মাকরুজ্জামান বলেন, মোংলা বন্দরের পিআরএফ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলিতে ট্রানজিট পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করার জন্য বিরাট সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এ বন্দর ব্যবহার করলে স্থল, জল এবং রেলপথে রাজশাহী, রংপুর এবং বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহন সহজতর এবং দ্রুততর হবে।
তিনি বলেন, মোংলা বন্দরের সক্ষমতা সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বার্ষিক ১৫০ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ৩৫০-৪০০ লক্ষ টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। এর ফলে বন্দরের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত শিপিং এজেন্ট, সিএন্ডএফ এজেন্ট, স্টিভডরিং এবং শ্রমিক শ্রেণীর মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। একই সঙ্গে আধুনিক বন্দরের মাধ্যমে ৪ লক্ষ টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতি বছর ১৫০ মিলিয়ন টন কার্গো এবং ৪০০ লক্ষ টিইইউ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহীন রহমান বাসসকে বলেন, মোংলা বন্দর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং করা হবে। কর্মক্ষমতা-ভিত্তিক সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্যতা রক্ষার জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর মোংলা বন্দর দিয়ে জেটি পর্যন্ত ৯.৫-১০ মিটারের ড্রাফটসহ ১০০টিরও বেশি অতিরিক্ত জাহাজ এবং জেটি থেকে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত ১৩০টি অতিরিক্ত জাহাজ পরিচালনা করা সম্ভব হবে।
তিনি আরও বলেন, মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করার জন্য বেশ কয়েকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে এবং ভবিষ্যতের উন্নয়নের জন্য কিছু প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ (এমপিএ) সোমবার ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে তার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী এবং ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে।