বাসস
  ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৩৬
আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৪:৪১

বিএনপিতে যোগ দিলেন রেজা কিবরিয়া

সোমবার গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যুক্ত হন রেজা কিবরিয়া। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা, ১ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-তে যোগ দিয়েছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া।

আজ সোমবার গুলশানে বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হাতে ফুল দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যুক্ত হন তিনি।

তার এই যোগদানকে স্বাগত জানিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজ দেশের একজন অত্যন্ত বিশিষ্ট সন্তান বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি তার নিজের যোগ্যতা বলে আইএমএফ-এর অত্যন্ত উচ্চ পদে কাজ করেছেন। পরবর্তীকালে, তিনি দেশে এসে ২০১৮ সালে গণফোরাম থেকে আমাদের যুক্ত ফ্রন্টের (নির্বাচনী জোট) মনোনয়ন নিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেছিলেন।

তিনি বলেন, ‘পরবর্তীকালে আপনারা দেখেছেন, তিনি রাজনীতির সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত যে ড. রেজা কিবরিয়া আজকে আমাদের মাঝে এসে আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও বলেন, আমি আমার দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তাকে আমাদের দলে স্বাগত জানাচ্ছি। 

২০১৮ সালের নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসনে (বাহুবল-নবীনগর) ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন।

বিএনপি’র মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ড. রেজা কিবরিয়া তার অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের নতুন বিনির্মাণে তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করতে অবদান রাখবেন।

বিএনপিতে যোগদানের জন্য রেজা কিবরিয়াকেও ফুল দেন বিএনপি মহাসচিব।

এ সময় রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমি বিএনপিতে যোগদান করতে পেরে খুবই গর্বিত। আমি বিএনপিতে আজকে ফরমালি জয়েন করলাম।’ 

বিএনপি সম্পর্কে তিনি আরও বলেন, এই দলটার ইতিহাস হলো গণতন্ত্রের ইতিহাস। দুই-দুইবার তারা ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছে। একবার শেখ মুজিবের হাতে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়েছিল। সেখান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রকে রক্ষা করলেন। আর দ্বিতীয় বার শেখ হাসিনা-জেনারেলের এরশাদের সঙ্গে গণতন্ত্র ধ্বংস করেন এবং আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আবারও এটা রক্ষা করলেন। তিনি এখন অনেক অসুস্থ। সবাই উনার জন্য দোয়া করবেন।’

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘এটা একটা ঐতিহাসিক ভূমিকা। একটা দল দুইবার বহুদলীয় গণতন্ত্র রক্ষা করেছে। আমি ইতিহাসে এরকম কোন উদাহরণ অন্য কোন দেশে দেখি না। এইসব কারণে আমি বিএনপি’র প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি।’

এ সময় বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে তিনি বলেন,  শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমার আদর্শ। উনার সাহস, উনার ব্যক্তিগত চরিত্র, উনার সততা— এগুলো নিয়ে এতো বছর পরও সবাই গর্ব করে। উনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যে এত বছর পরও গ্রামের লোক উনার কথা বলে। তারা বলে, এ রকম মানুষ বাংলাদেশে আর জন্মাবে না। হয়তো আর জন্মাবে না।

বাবা-মায়ের ব্লাড লাইন তারেক রহমান উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি যে বিএনপি এখন যেই নেতৃত্বে আছে এবং বিএনপি’র সিনিয়র নেতা যারা আছেন, তারা আমাদের দেশের নতুন প্রজন্মের সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন।’

এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  তারেক রহমান সাহেবের বাবা কি ছিলেন ও মা কি আছেন— এটা যদি আপনারা চিন্তা করেন। এটা ইনক্রেডিবল, এটা বাংলাদেশে আর কারও ওই কোয়ালিটির ব্লাড লাইন নেই, তা আপনাদেরকে আমি বলতে পারি। 

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘আমরা সবাই তাকে (তারেক রহমান) একটা নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সাহায্য করব।’

তিনি আরও বলেন, ‘উনি বিদেশে আছেন, এটা একদিক থেকে দুঃখজনক। তবে, আরেক দিক থেকে আমি এটাতে খুশি যে, তিনি (তারেক রহমান) বিদেশের সব কোয়ালিটি ও সব প্রশাসনিক জিনিসগুলো দেখছেন, শিখছেন এবং সেইগুলো বাংলাদেশে উনি আনবেন বলে আমি আশা করি।’

তিনি বলেন, আমি মনে করি, উনার ইংল্যান্ডে থাকাও দেশের মানুষের জন্যে লাভজনক। উনি অনেক কিছু নিয়ে আসবেন, এ দেশে যেটা আগে ছিল না।

রেজা কিবরিয়া বলেন, ‘বাংলাদেশটাকে উন্নত করে এশিয়ার মধ্যে প্রথম তিন দেশের মধ্যে আনাটা অসম্ভব কিছুই নয়।  আপনারা ভাবছেন, আমি কি রূপকথার মতো বলছি। এটা পরে দেখবেন।’

তিনি বলেন, আমি প্রায় ৪০ বছর ৩৫টা দেশে কাজ করেছি। আমি আপনাদেরকে বলতে পারি, আমাদের দেশের মানুষের কোয়ালিটি এটা হলো ‘টপ ক্লাস’ এবং এই মানুষগুলোকে দিয়ে একটা ‘টপ ক্লাস’ প্রথম সারির দেশ তৈরি করা যাবে, ইনশাআল্লাহ।’

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, ‘বিএনপিকে এই সুযোগটা যদি ভোটাররা দেয়, তাহলে আপনারা দেখবেন যে এই দেশের জন্যে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এর জন্যে তারা কি করতে পারে। আপনারা তখন তা দেখতে পারবেন।’

তিনি বলেন, আমি আশা করি, আমার এলাকায় নবীগঞ্জ-বাহুবল সেখানে আমার কাজ করার একটা সুবিধা হবে। যদি ওনারা জাতীয় কোন জায়গায় আমাকে কাজ করার সুযোগ দেন, তবে আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। 

রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি খুব ভালো চাকরি ছেড়ে এসেছি। আপনারা জানেন, আইএমএফ-এর চাকরির লাভজনক একটা চাকরি। সেই চাকরি ছেড়ে আমি আসছি দেশের জন্যে, দেশের মানুষের জন্যে। তাদের জন্য কাজ করতে এসেছি। এটা ছিল আমার বাবার স্বপ্ন। আমি আশা করি, সেটা পূরণ করতে পারবো।

এই যোগদান অনুষ্ঠানে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদও বক্তব্য রাখেন।

রেজা কিবরিয়া হবিগঞ্জ-১ আসন থেকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। বিএনপি’র আগামী সংসদ নির্বাচনে জন্য ২২৭ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে। সেখানে হবিগঞ্জ-১ আসনটি ফাঁকা রেখেছে।

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রেজা কিবরিয়া বিএনপি’র জোটসঙ্গী জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে একই আসনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করেছিলেন।

২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগে রেজা কিবরিয়া গণফোরামে যোগদান করে পরে দলটির সাধারণ সম্পাদক হন। পরে তাকে কেন্দ্র করে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। 

এরপর তিনি ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদ গঠন করেন। 

সেখানে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু সেখানে তাকে কেন্দ্র করে এই দলটিও দুই ভাগে বিভক্ত হয়।