শিরোনাম

বিপুল ইসলাম
লালমনিরহাট, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : উত্তরাঞ্চলের অন্যান্য জেলার মতো লালমনিরহাটেও আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ধানের সোনালি রঙয়ের ঝলক কৃষকদের মুখে খুশির ছাপ ফেললেও, বাজারে দাম কিছুটা কমের কারণে অনেক কৃষক হতাশা প্রকাশ করেছেন।
গত বছর মৌসুমের শুরুতে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান সর্বোচ্চ ১ হাজার ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। তবে এবারে দাম প্রায় ১০০ টাকা কমে গেছে। কৃষকেরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, কয়েক দিনের মধ্যে বাজারে ধানের সরবরাহ আরও বৃদ্ধি পেলে দাম আরও কমে যেতে পারে।
আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কৃষক আব্দুর রহমান (৪৬) বাসসকে বলেন, বাতাস ও বৃষ্টির কারণে তার ফসল কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ধানের উৎপাদন খরচ বেশি অন্যদিকে বাজারে দাম কমে যাওয়ায় তিনি অনেকটা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
তিনি বলেন, আমি একশ মণ ধান বিক্রি করেছি। গত বছরের তুলনায় এবারের প্রতি মণ ধানের দাম প্রায় ১০০ টাকা কমে গেছে। হিসাব করলে প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের বলাইর পাঠ গ্রামের কৃষক সুনীল চন্দ্র রায় (৬৪) বলেন, তিনি প্রায় এক একর জমিতে ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে ধান উৎপাদনের খরচ হয়েছে প্রায় ১৩ হাজার টাকা, কারণ মাঠের সব কাজ তিনি শ্রমিক দিয়ে করিয়েছেন।
সুনীল চন্দ্র রায়ের হিসাব অনুযায়ী, এবারে প্রতি বিঘায় ১৭ মণ ধান পেয়েছেন। বাজারে প্রতি মণ ধানের দাম ১ হাজার ১৫০ টাকা। এক বিঘা জমির ১৭ মণ ধানের মোট মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ১৯ হাজার ৫৫০ টাকা। এতে ব্যয় বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি তার লাভ প্রায় ৬ হাজার ৬৫০ টাকা। তার উপর আবার ধানের দাম কমেছে।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ছয় মাসের পরিশ্রমের পর এত কম লাভে একটি পরিবারের প্রয়োজন কতটা পূরণ করা সম্ভব?
জেলা সদরের বড়বাড়ী বাজারের বড় ধান ব্যবসায়ী মানিক মহাজন (৪৭) বলেন, গোডাউনে আজকে প্রতি মণ ধান ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৬০ টাকায় ক্রয় করা হচ্ছে। এই মুহূর্তে ধানের দাম বাড়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
কালিগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ইউনিয়নের কৃষক শফিকুল ইসলাম (৪২) ও তাহের আলী (৫৩) জানান, জমি চাষ থেকে শুরু করে সার, ওষুধ, শ্রমিক, কাটতি, মাড়াই ও পরিবহন—ধান উৎপাদনের সব ধাপেই খরচ বেড়ে গেছে।
তাদের অভিযোগ, মৌসুমের শুরুতেই দালাল ও পাইকারি সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাওয়া বাধাগ্রস্ত করে। ফলে সরকারি গুদাম ও মিলগুলোতে ধান পৌঁছালেও প্রান্তিক কৃষক লাভের বদলে লোকসানের শঙ্কায় মৌসুম কাটান।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৮৬ হাজার ৬৪৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। খরিফ-২ মৌসুমে চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৬ টন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বাসসকে জানান, আমন চাষে কৃষকদের নিয়মিত সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে এবং চাষাবাদ অনেকটা ভালো হয়েছে। উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে তাই ধানের দাম বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
ফসল ভালো হলেও বাজারে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় কৃষকরা সমস্যায় পড়েছেন। তারা জানিয়েছেন, বছরে ৭-১০ একর জমি চাষ করলেও সংসার চালানো কঠিন হয়ে গেছে। কৃষকরা আশা করছেন, সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, ন্যায্য ধানের মূল্য নিশ্চিত করবে এবং উৎপাদন খরচ কমানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।