শিরোনাম

ঢাকা, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, জলবায়ু সহনশীলতা ও টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করতে আজ সুন্দরবন অঞ্চলে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার উদ্যোগ (সিআরআইএস) প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে। ফরাসি উন্নয়ন সংস্থার (এএফডি) আর্থিক সহায়তায় বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বন অধিদপ্তরের নেতৃত্বে আইইউসিএন বাংলাদেশ উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করছে। এটি বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে এএফডি’র প্রথম প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বলে আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
রাজধানীতে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বন অধিদপ্তর ও আইইউসিএন বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরপর এএফডি ও আইইউসিএন-এর মধ্যে অনুদান অর্থায়ন চুক্তি সম্পাদিত হয়।
৩০ লাখ ইউরোর এ অনুদান এএফডি ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সংরক্ষণ ও জলবায়ু কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারিত্বের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, সুন্দরবন বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল এবং ৬০ লাখেরও বেশি উপকূলীয় বাসিন্দাদের প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। এটি মানুষের কার্যক্রম ও জলবায়ু পরিবর্তনের তীব্র প্রভাবের কারণে ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে রয়েছে।
সিআরআইএস প্রকল্প সংরক্ষণ, পুনরুদ্ধার ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহনশীলতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সমন্বিত, বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতির মাধ্যমে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চায়।
আইইউসিএন বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতায় কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এতে এএফডি উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে কাজ করবে।
প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো— সুন্দরবনের দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবস্থাপনা উন্নত করা এবং অংশগ্রহণমূলক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের মাধ্যমে স্থানীয় লোকজনের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে এএফডি’র ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর সিসিলিয়া কর্টেস জলবায়ু কার্যক্রম, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও স্থানীয় সম্প্রদায়ের সহনশীলতার ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য ফ্রান্সের দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, এই অংশীদারিত্ব সুন্দরবন রক্ষায় আমাদের যৌথ দায়িত্বকে প্রতিফলিত করে। সুন্দরবন লাখ লাখ মানুষের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ এবং বন্যপ্রাণীর আশ্রয়স্থল।
বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী ম্যানগ্রোভ বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় সরকারের নেতৃত্ব ও প্রতিশ্রুতি তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিক লক্ষ্য অনুযায়ী সুন্দরবন রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই প্রকল্প আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনরুদ্ধারে এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে আরো ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে সহায়তা করবে।
আইইউসিএন বাংলাদেশের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ বিপাশা হোসেন বিজ্ঞানভিত্তিক ও সমন্বিত পদক্ষেপের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সুন্দরবন একটি ভঙ্গুর বাস্তুতন্ত্র এবং লাখ লাখ মানুষের লাইফলাইন। সিআরআইএস-এর মাধ্যমে আমরা বৈজ্ঞানিক প্রমাণ, প্রথাগত জ্ঞান ও সম্প্রদায়ের অভিজ্ঞতাকে একত্রে আনতে চাই।
সিআরআইএস প্রকল্পের আওতায় আইইউসিএন বাংলাদেশ জলবায়ু-ঝুঁকি মূল্যায়ন, হাইড্রোলজিক্যাল গবেষণা, সামাজিক-অর্থনৈতিক গবেষণা, প্রাণীবৈচিত্র্য জরিপ এবং কমিউনিটি-ভিত্তিক পরিবেশ পুনরুদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
উদ্যোগটি অভিজ্ঞতা বিনিময়, যুবসম্পৃক্ততা এবং করমজলে সুন্দরবন ইন্টারপ্রিটেশন সেন্টার উন্নয়নেও সহায়তা করবে, যাতে জনসচেতনতা ও শিক্ষা জোরদার হয়।
উদ্যোগটি জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল, জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ও জেন্ডার অ্যাকশন প্ল্যানসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির সঙ্গে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এ ছাড়া, সিআরআইএস টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং কুনমিং-মন্ট্রিল গ্লোবাল বায়োডাইভারসিটি ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক লক্ষ্যসমূহকে সমর্থন করে, যা বাংলাদেশকে জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে প্রকৃতিনির্ভর সমাধানের শীর্ষ কণ্ঠস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে।
সমন্বিত পুনরুদ্ধার, জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের উন্নতি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিউনিটি সম্পৃক্ততার মাধ্যমে প্রকল্পটি টেকসই, সমৃদ্ধ ও সহনশীল সুন্দরবনের জন্য বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গিকে সুদৃঢ় করছে।