বাসস
  ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০:৪৯

এবারের গণভোট হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক : প্রধান উপদেষ্টা

মঙ্গলবার বিজয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সিএ প্রেস উইং

ঢাকা, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আসন্ন গণভোটকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘এই গণভোট হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। এখানে আপনাদের প্রতিটি ভোট আগামী দিনের রাষ্ট্রব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করবে।’

বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেন, ‘এই কারণেই আমরা গণভোটের আয়োজন করেছি—যাতে দেশের ভবিষ্যৎ সংস্কারদিশা নির্ধারণে জনগণ সরাসরি সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।’ তিনি বলেন, ‘এবারের নির্বাচনটি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একই দিনে এবার দুটি ভোট। একটি সংসদ সদস্য নির্বাচনের ভোট। আরেকটি গণভোট—যার প্রভাব হবে শতবর্ষব্যাপী।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘জুলাই সনদ জাতির ভবিষ্যৎ পথযাত্রার একটি ঐতিহাসিক দলিল।’ তিনি বলেন, ‘এই সনদে আমরা যে সংস্কারমালা প্রস্তাব করেছি—রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন, প্রশাসনিক জবাবদিহিতা, দুর্নীতি হ্রাস, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং সমাজে সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা—এসব বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন জনগণের সুস্পষ্ট মতামত।’

তিনি আরও বলেন, ‘কারণ একটি জাতীয় রূপান্তর কখনোই একক নেতৃত্ব বা একটি প্রশাসনের মাধ্যমে টেকসই হয় না; জনগণকেই চূড়ান্ত সম্মতি দিতে হয়।’

গণভোটের তাৎপর্য তুলে ধরে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘এর মাধ্যমে আপনারা জানিয়ে দিন—আপনারা কি জুলাই সনদের সংস্কার কাঠামোকে এগিয়ে নিতে চান কি না।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের ভোটই নির্ধারণ করবে রাষ্ট্র কোন পথে অগ্রসর হবে, প্রশাসন কোন কাঠামোয় পুনর্গঠিত হবে এবং নতুন বাংলাদেশ কেমন রূপ পাবে।’

ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কাজেই অবশ্যই ভোট দিন। ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করুন।’

ভাষণে প্রবাসীদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সক্রিয় উদ্যোগের ফলে প্রথমবারের মতো লাখ লাখ প্রবাসী এবার পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন, ‘এবারের যে ধারা শুরু হলো, তা ভবিষ্যতে থামবে না।’

রাষ্ট্র সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘একটি আধুনিক, ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করা অত্যাবশ্যক।’ তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিচার বিভাগকে স্বতন্ত্র প্রশাসনিক কাঠামো দিয়ে পৃথক সচিবালয় গঠন করা হয়েছে।’

পুলিশ প্রশাসন প্রসঙ্গে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ‘আমরা চাই এই আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হোক। সেই লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫।’

মানবাধিকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘অসাধু ব্যবস্থার পরিসমাপ্তি ঘটানোর উদ্দেশ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশন অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি করেছে।’

ভাষণের শেষাংশে তিনি বলেন, ‘আমরা আজ এক নতুন ইতিহাসের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছি। এই দেশ আমাদের, এই রাষ্ট্র আমাদের, এর ভবিষ্যতও আমাদের হাতেই। এখন আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। আমরা এবারের বিজয় দিবসকে জাতীয় জীবনে নতুনভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে নিতে চাই।’

তিনি বলেন, ‘আসুন, শতবর্ষের সংগ্রাম ও বহু কষ্টে অর্জিত স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিতে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে তুলি।’