বাসস
  ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২১:৪৭

স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অপটিক্যাল ফাইবার রপ্তানি করবে বিসিএসএল

ছবি : সংগৃহীত

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান

খুলনা, ১৮ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): দেশের চাহিদা পূরণ করে আগামী দুই বছরের মধ্যে নেপাল এবং আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে ফাইবার অপটিক্যাল রপ্তানি করার পরিকল্পনা নিয়েছে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেবল শিল্প লিমিটেড (বিসিএসএল)। সময়ের সঙ্গে তালমিলিয়ে আধুনিক পণ্য উৎপাদনের মধ্যদিয়ে ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি দেশের একটি উৎপাদন-ভিত্তিক এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। 

দেড় দশক আগে উৎপাদন শুরু হওয়ার পর থেকে বিসিএসএল প্রতি বছর ফাইবার-অপটিক কেবল বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। যদিও খুলনায় প্রতিষ্ঠিত পাট এবং স্পিনিং মিলসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প বছরের পর বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে। সেখানে বিসিএসএল কেবল কৌশল অব্যাহত রাখেনি। বরং বেসরকারি নির্মাতাদের সাথে প্রতিযোগিতা করে ধারাবাহিকভাবে মুনাফা অর্জন করছে। বিসিএসএল গত অর্থবছরে (২০২৪-২৫) ৩১ কোটি টাকা আয় করেছে এবং গত পাঁচ বছরে ১৪৮ কোটি টাকা লাভ করেছে।

বিসিএসএল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠানটি অপটিক্যাল ফাইবার কেবল উৎপাদন শুরু করে। 

বর্তমানে কোম্পানিটি সারা দেশে ব্যবহৃত প্রায় ৬০ শতাংশ অপটিক্যাল ফাইবার ও টেলিকম কপার কেবল সরবরাহ করছে। যা ডিজিটাল সংযোগের যুগে এক শক্তিশালী অবস্থান নিশ্চিত করে।

তারা দেশের পানি ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) জন্য উপযুক্ত উচ্চ ঘনত্বের পলি (এইচডিপি) পাইপ উৎপাদনের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে একটি স্থানীয় এলাকা নেটওয়ার্ক (এলএএন) কেবল প্ল্যান্ট স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাহিদা পূরণের জন্য একটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনাও তৈরি করেছে। এছাড়াও ২০৩০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের বিদ্যুৎ খাতে অবদান রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাও নিয়ে এসেছে এ প্রতিষ্ঠানটি।

বিসিএসএল-এর কর্মকর্তারা জানান, সময়োপযোগী পণ্য বৈচিত্র্য, যন্ত্রপাতির ক্রমাগত আধুনিকীকরণ এবং বাজারের চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পরিকল্পিত সম্প্রসারণের দ্বারা কোম্পানির স্থিতিশীল অগ্রগতি পরিচালিত হয়ে আসছে। ফলে এর সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। 

কোম্পানি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল প্ল্যান্টে আরও তিনটি নতুন মেশিন স্থাপন করে বার্ষিক উৎপাদন ২০ হাজার কিলোমিটার থেকে ২৫ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করার জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে। আরও দুটি নতুন মেশিন স্থাপন করে উৎপাদন ক্ষমতা ৬ হাজার ৫০০ কিলোমিটার থেকে ৮ হাজার কিলোমিটারে উন্নীত করেছে।

এইচভিপিই টেলিকম, ডাক্ট প্ল্যান্টে মেশিন স্থাপন এবং সুপার এনামেল কপার ওয়্যার প্ল্যান্টের উৎপাদন ক্ষমতা ৩০০ টন থেকে ৬০০ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান। একই সঙ্গে কোম্পানিটি নিজস্ব তহবিল দিয়ে ছাদে সৌর প্যানেল স্থাপন এবং আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সেগুলো চালু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। 

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ কেবল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড (বিসিএসএল) ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অধীনে কাজ করে। এর মধ্যে একটি  কেবল শিল্প লিমিটেড। যা টেলিফোন কেবল তৈরি করে। অন্যটি ছিল টেলিফোন শিল্প সংস্থা (টিএসএস)। যা টেলিফোন সেট, ফ্যাক্স মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করে।

প্রতিষ্ঠান দুটি পশ্চিম জার্মানির সিমেন্স এজি-র প্রযুক্তিগত সহায়তায় ১৯৬৭ সালের ৮ মে খুলনার শিরোমণি শিল্প এলাকায় ভৈরব নদীর তীরে ৩১ দশমিক ৫৮ একর জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর কোম্পানিটি ১৯৭০ সালে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে এবং ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। কোম্পানির উৎপাদিত তামার টেলিকম কেবল দেশীয় চাহিদার ১০০ শতাংশ পূরণ করে। ২০০৫ সালে সিমেন্স এজি-র শেয়ার বিনিয়োগের পর কোম্পানিটি কোম্পানি আইনের অধীনে কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে অপটিক্যাল ফাইবার কেবল প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। ২০১৬ সালে এইচভিপিই টেলিকম ডাক্ট প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয় এবং ২০১৯ সালে বৈদ্যুতিক ওভারহেড কন্ডাক্টর এবং কেবল উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়। 
বিসিএসএল -এর মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মোসলেম উদ্দিন বাসসকে বলেন, ১৯৯৮ সালে একটি কোর প্রি-হিটিং ইউনিট যোগ করা হয়। ২০০১ এবং ২০০৩ সালে ট্যান্ডেম লাইন এবং স্ট্র্যান্ডিং লাইন স্থাপন করা হয়। 

২০০৪ সালে একটি ড্রাম টুইস্টার মেশিন স্থাপন করা হয়।

তিনি বলেন, ক্রমাগত প্রযুক্তিগত আপগ্রেডের মাধ্যমে বিসিএসএল প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। কোম্পানিটিতে বর্তমানে ৩৩ জন কর্মকর্তা, ১৬৩ জন কর্মী এবং অতিরিক্ত ১২৫ জন আউটসোর্স কর্মী কর্মরত রয়েছে। 

কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ( প্রোডাকশন) এনামুল হক বলেন, বাংলাদেশ কেবল ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডে উৎপাদনের জন্য আমদানি করা কাঁচামালের মান এবং উৎপাদিত পণ্যের মান বুয়েট, কুয়েট, চুয়েট এবং এমআইএসটি দ্বারা পরীক্ষা করা হয়।

তিনি বলেন,  ‘যোগাযোগসহ বিভিন্ন খাত বিবেচনা করে দেশে পাঁচ লাখ কিলোমিটার ফাইবার অপটিক্যাল কেবল নেটওয়ার্ক থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে মাত্র দেড় লাখ কিলোমিটার ফাইবার নেটওয়ার্ক রয়েছে। আবার বিদ্যমান নেটওয়ার্কের ৭৫ শতাংশ ওভারহেড নেটওয়ার্ক, যা দুর্যোগের সময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে। যোগাযোগ নেটওয়ার্ক মসৃণ এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ রাখার জন্য সংযোগগুলিকে ভূগর্ভস্থ করতে হবে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবা খাতের পুরাতন কেবল নেটওয়ার্কগুলিকে একটি একক ফাইবার-অপটিক কেবল নেটওয়ার্কের আওতায় আনা উচিত। এ অবস্থায় দেশে ফাইবার অপটিক্যাল কেবল শিল্পের জন্য প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন, ঐতিহ্যবাহী টেলিফোন ব্যবহার হ্রাসের সাথে সাথে তামার টেলিফোন-তারের চাহিদা কমতে শুরু করেছে। শুধু টেলিফোন-তারের উৎপাদনের উপর কোম্পানি টিকে থাকতে পারবে না বুঝতে পেরে নতুন সুযোগ খুঁজতে শুরু করে। তাতেই আসে সাফল্য।