বাসস
  ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৫৪

হারিয়ে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব, নেই পিঠাপুলির ধুম

, নেই পিঠাপুলির ধুম। ছবি : বাসস

রেজাউল করিম মানিক

রংপুর, ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): সকালের শিশির ভেজা প্রকৃতি জানান দেয় শীত আসছে। বছর ঘুরে আবার এসেছে আরেকটি আয়োজনের উপলক্ষ, আবহমান বাংলার অন্যতম উৎসব গ্রাম-বাংলার নবান্ন। অগ্রহায়ণের শুরুতে নতুন চালের ভাত আরও পিঠাপুলি দিয়ে এ আয়োজন অতীতে জাকজমকপূর্ণ হলেও কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার এই উৎসবটি। তবে কিছু জায়গায় পিঠা উৎসব হয়ে থাকে সীমিত পরিসরে।

বাঙালির চিরায়ত ঐতিহ্য নতুন ধান কাটা ও সেই ধানের প্রথম অন্ন খাওয়াকে কেন্দ্র করে জমে ওঠে নবান্ন। এ বছরও হেমন্তের কুয়াশা ভেজা দিগন্ত জোড়া মাঠে পাকা ধান ক্ষেতের হলুদ রঙ দেখে কৃষকের মন আনন্দে ভাসছে। কৃষকদের গোলাঘর ভরে যাবে আমনের নতুন ধান দিয়ে। এরপরও জৌলুস নেই নবান্নের।

জানা গেছে, এক সময় অগ্রহায়ণের শুরুতে গ্রামজুড়ে পিঠা-পায়েসের ঘ্রাণ, আত্মীয়-স্বজনের সমাগম, আর নতুন চালের ভাত রান্নার ধুম পড়ে যেত। কিন্তু এখন এসব কল্পনায় ও গল্পে সীমাবদ্ধ। সবকিছু ধীরে ধীরে যেন মিলিয়ে যাচ্ছে স্মৃতির পাতায়। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ সিরাজুল ইসলাম বলেন, উত্তরের পাঁচ জেলা রংপুর, লালমনিহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে এবছর আমন চাষ হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৯ লাখ ৯৬ হাজার টন।

এই অঞ্চলে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে, কৃষকের ঘরে ঘরে এখন নবান্নের উৎসব হওয়ার কথা থাকলেও ডিজিটাল প্রযুক্তির কারণে সবকিছুই যেন বিলীন হচ্ছে মনে করেন এই কর্মকর্তা।

বর্তমান প্রজন্ম নবান্নকে চেনে গল্পে, সিনেমায়, অথবা পাঠ্যবইয়ের পাতায়। মাঠে নতুন ধান ওঠে ঠিকই, কিন্তু নেই সেই প্রাণচাঞ্চল্য অপেক্ষার উত্তেজনা। আধুনিকতার ছোঁয়া, ব্যস্ততার চাপ আর ধর্মীয় কিছু ব্যাখ্যার কারণে নবান্নের অনুষ্ঠান আজ হারিয়ে যেতে বসেছে কালের বিবর্তনে।

বাংলার কৃষিজীবী সমাজে শস্য উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ের যে সকল আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব পালিত হত নবান্ন তার মধ্যে অন্যতম। অগ্রহায়ণকে ঘিরে নবান্নের ঘ্রাণে ভরে উঠে কৃষকের অঙ্গিনা। কিন্তু এখন পিঠাপুলির ধুম ছাড়াই আসে অগ্রহায়ণ, নবান্ন যেন অন্য দিনের মতোই একটি দিন।  

উত্তরাঞ্চলের জেলা রংপুরের কৃষকদের ঘরে ঘরে আমন ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়েছে। নতুন ধান ঘরে তুরতে পেরে খুশি চাষীরা। এরমধ্যে গ্রামীণ জীবন থেকে নবান্ন উৎসব হারিয়ে যেতে বসলেও কিছু মানুষ বাপ-দাদার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। 

গংগাচড়ার লক্ষীটারী ইউনিয়নের কৃষক আল হাবিব বলেন, কয়েক বছর আগেও ধুমধাম করে পহেলা অগ্রহায়ণে তিনি নবান্ন পালন করতেন। নবান্ন আসলে আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে খাওয়াতেন। কয়েক বছর থেকে তার বাড়িতে এসব অনুষ্ঠান অনুপস্থিত।

কৃষক আতাউর রহমান বলেন, আগে নবান্ন উৎসব ধুমধাম করে পালিত হত। এখন ধুমধাম না থাকলেও বাপ-দাদার ঐতিহ্যটি কোনো রকম ধরে রেখেছে তার পরিবার।
তবে উত্তরাঞ্চলের ঘরে ঘরে আবারও নবান্ন ফিরে আসুক এমনটাই চান এ অঞ্চলের কিষাণ-কৃষাণীসহ সাধারণ মানুষ।  

ক্ষেত মজুর সমিতির উত্তর অঞ্চলের আহবায়ক পলাশ কান্তি নাগ বলেন, নবান্ন উৎসব একসময় এই অঞ্চলের ঘরে ঘরে হতো। এখন এটি বিলুপ্তির পথে। সরকারের কৃষি বিভাগ থেকে প্রতি উপজেলায় নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হলে আবার জৌলুস ফিরতো ঐতিহ্যবাহী এ উৎসবটির।