শিরোনাম

ঢাকা, ১৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রস্তুতি দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর ও অপতথ্য প্রতিরোধ করে জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দেওয়ায় দায়িত্বে নিয়োজিত ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ফ্যাক্টওয়াচ হল একটি স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং সত্তা, যা লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদিত এবং সেন্টার ফর ক্রিটিকাল অ্যান্ড কোয়ালিটিভেটিভ স্টাডিজ (সিকিউএস) দ্বারা পরিচালিত।
ফ্যাক্টওয়াচ জানায়, ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রস্তুতি দাবিতে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার পুরোনো ভিডিও প্রচার শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টিয়াচ।
সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু ফেসবুক পেজ ও প্রোফাইল থেকে ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা পাওয়া যায়।
আজ ১৩ নভেম্বর কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের ডাকা এই কর্মসূচির প্রস্তুতি দাবিতে ফেসবুকে আলাদা আলাদা কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ছে।
কিন্তু, ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে যে বাস্তবে ভিডিওগুলো অনেক আগের এবং সেগুলো ভিন্ন ঘটনার।
ফ্যাক্টওয়াচের অনুসন্ধান টিম জানায়, আওয়ামী লীগের ডাকা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচির প্রস্তুতি দাবিতে উক্ত পোস্টগুলোতে মোট পাঁচটি ভিডিও পাওয়া যায়।
তারা আরও জানায়, ভিডিওগুলো সম্পর্কে জানার জন্য, এগুলো নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ ও কি-ওয়ার্ড সার্চ করা হয়। এর ফলে বাংলাদেশের মূলধারার কিছু সংবাদমাধ্যম থেকে প্রাপ্ত রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী জানা গেছে যে ভিডিওগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয়।
ভিডিও ১-ভাইরাল ভিডিওটির অনুরূপ একটি ভিডিও প্রথম আলোর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে পাওয়া গেছে। ২০২৩ সালের ২৭ নভেম্বর ভিডিওটি আপলোড করা হয়।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৬ নভেম্বর অবরোধের সমর্থনে সিলেটে মশাল মিছিল করেছিল সেখানকার বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা। সেই দিন সিলেটের সুবিদ বাজার এলাকায় কয়েকটি যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছিল।
ভিডিও ২- কালের কণ্ঠের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাঁচ দফা দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ঢাকার সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ সম্পর্কিত একটি রিপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি প্রকাশিত এই রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত একটি ছবির সাথে রিভার্স ইমেজ সার্চের সময়ে ব্যবহৃত এই ভিডিও থেকে নেওয়া একটি কি-ফ্রেম মিলে যায়।
রিপোর্টে আরও বলা হয়, ঘটনাটি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারির। প্রথম আলো এবং দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এ এই একই ঘটনার ছবি এবং ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানেও উল্লেখ করা হয়, ঘটনাটি চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ঘটেছে।
ভিডিও ৩-এই ভিডিওটির একটি দীর্ঘ সংস্করণ এটিএন বাংলা নিউজ এর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে পাওয়া যায়।
চলতি বছরের ৩ নভেম্বর আপলোড হওয়া এই ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়, ‘মাদারীপুরে বিএনপি’র মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ।’
মাদারীপুর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলু মনোনয়ন না পাওয়ায় তার কর্মী-সমর্থকরা ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে।
ভিডিও ৪- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও সমমনা দলগুলো ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর সারাদেশে তিন দিনের সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল।
অবরোধটি তৎকালীন সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ছিল। অবরোধের তৃতীয় দিন ২ নভেম্বর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা।
এই ঘটনা সম্পর্কে বাংলা ট্রিবিউনে ২০২৩ সালের ২ নভেম্বর প্রকাশিত একটি রিপোর্টে অন্তর্ভুক্ত ছবির সঙ্গে আলোচিত এই ভিডিওর একটি কি-ফ্রেমের মিল পাওয়া যায়।
ভিডিও ৫- এই ভিডিওটি খেয়াল করলে দেখা যাবে, কয়েকজনের মাথায় ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ লেখা হেডব্যান্ড। পাশাপাশি অনেকে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানও দিচ্ছিল।
এই সূত্র অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক কিছু কি-ওয়ার্ড ধরে সার্চ করে ডেইলি স্টার বাংলার ফেসবুক পেজে আপলোড হওয়া মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচির একটি ভিডিও পাওয়া যায়। সেখানে অনেকের মাথায় এই একই লেখাযুক্ত হেডব্যান্ড দেখা যায়।
ভিডিওর ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয় যে চলতি বছরের ৬ অক্টোবর উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলা লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় একযোগে ‘জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ আন্দোলনের অংশ হিসেবে মশাল প্রজ্বালন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
একাত্তর টিভির ইউটিউব চ্যানেলেও এই একই ঘটনার ভিডিও পাওয়া যায়, সেখানেও একই হেডব্যান্ড দেখতে পাওয়া যায়।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের তারিখ আজ ১৩ নভেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ঘোষণা করা হবে।
এই দিনকে ঘিরে সামাজিক মাধ্যমে অনেক আওয়ামী লীগ নেতা ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা দেয়।
সজীব ওয়াজেদ জয়ের ফেসবুক পেজ থেকেও এ ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো এই ঘটনার অনেক আগের বলে শনাক্ত করেছে ফ্যাক্টওয়াচ।
সব সবকিছু বিবেচনা করে ফ্যাক্টওয়াচ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ছবিগুলোর ওপর ভিত্তি করে করা দাবিগুলোকে মিথ্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও, খবর ও গুজব ছড়ানোর ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসব বিষয় নজর এলে ফ্যাক্ট চেক করে সত্য তুলে ধরাসহ গুজব প্রতিরোধে কাজ করে যাচ্ছে ফ্যাক্টওয়াচ।
গত বছর থেকে ভারতীয় গণমাধ্যম এবং ভারত থেকে পরিচালিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, পাশাপাশি দেশেও বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে বাংলাদেশকে জড়িয়ে, অন্তর্বর্তীকাল সরকার, সম্প্রতি খাগড়াছড়ি বিষয়ে, চব্বিশের আন্দোলনে অংশ নেয়া দল ও সংগঠনের বিরুদ্ধে গুজব ও ভুয়া তথ্য প্রচারের হার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রমাণ পেয়েছে ফ্যাক্টওয়াচ।