শিরোনাম

ঢাকা, ১১ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস) : বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার হলে আজ বিকেলে ‘সাহিত্যের রাজনীতি’ শীর্ষক একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের সাহিত্য ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে সমান্তরাল সম্পর্ক তুলে ধরা হয়।
বাংলা একাডেমি আয়োজিত এই সেমিনারে মূল বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ কথাসাহিতিক জিয়া হায়দার রহমান।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিরদৌস আজিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
সেমিনারে সাহিত্য, ক্ষমতা ও রাজনীতির আন্তঃসম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয় এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে সমসাময়িক সাহিত্যিক বয়ানগুলো কীভাবে গঠিত হচ্ছে তা বিশ্লেষণ করা হয়।
লেখক, শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই আলোচনায় সাহিত্যিক অভিব্যক্তি ও রাজনৈতিক চিন্তার মধ্যকার বিকাশমান সম্পর্ক নিয়ে প্রাণবন্ত মতবিনিময় হয়।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম সাহিত্যের রাজনৈতিক প্রকৃতি নিয়ে আলোকপাত করেন।
তিনি বলেন, ‘সব সাহিত্যই রাজনৈতিক প্রকৃতির। যদিও তা সরাসরি রাজনীতি নিয়ে কথা না বলে, তবুও সমাজের ক্ষমতার সম্পর্ককে প্রতিফলিত ও উন্মোচিত করে।’
তিনি বলেন, “সব সাহিত্যই প্রকৃতিগতভাবে রাজনৈতিক, এমনকি যখন তা সরাসরি রাজনীতি নিয়ে কথা না বলে, তবুও তা সমাজের ক্ষমতার সম্পর্ককে প্রতিফলিত ও উন্মোচিত করে।”
মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ কথা সাহিত্যিক জিয়া হায়দার রহমান বলেন, সাহিত্য ও শিল্পের মৌলিক ভিত্তি হিসেবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা হলেও প্রকৃত স্বাধীনতা কেবল তখনই বিকশিত হয় যখন জবাবদিহিতা নিশ্চিত থাকে।
জিয়া হায়দার রহমান জবাবদিহিতাকে সৃজনশীলতা ও শাসনের মধ্যে সেতুবন্ধ হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘একটি সমৃদ্ধ সাহিত্য সংস্কৃতি ও একটি প্রাণবন্ত রাজনৈতিক সংস্কৃতির মধ্যে যে মিল রয়েছে, তা হলো জবাবদিহিতা। যেখানে জবাবদিহিতা অনুপস্থিত, সেখানে গড়পড়তা মানের আধিপত্য বিস্তার করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনপরিসরে জবাবদিহিতা এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আমরা প্রতিভা, মঙ্গল এবং সমাজে অগ্রসর করার মতো মূল্যবোধগুলোকে চিহ্নিত করি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সাধারণত মনে করি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সাহিত্য বা শিল্পের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয় জবাবদিহিতার মাধ্যমে।
রাষ্ট্রীয় হোক বা অরাষ্ট্রীয়-যে শক্তিই স্বাধীনতা সীমিত করতে চায়, যদি তারা জবাবদিহির আওতায় আসে, তবে স্বাধীনতাই জয়ী হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনপরিসরে জবাবদিহিতা সেই একই প্রক্রিয়া যা আমাদের প্রতিভা, মেধা ও সমাজে এগিয়ে নেওয়ার মতো মূল্যবোধ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে সাহিত্য সমালোচনার পরিপক্ব সংস্কৃতি নেই, সেখানে কোনো সাহিত্য সংস্কৃতিও বিকশিত হতে পারে না।’
সুশাসন ও সাহিত্য বিকাশের মধ্যে তুলনা করে জিয়া হায়দার রহমান বলেন, যথাযথ জবাবদিহিতা ছাড়া সুশাসন সম্ভব নয়; একইভাবে সাহিত্য সমালোচনা ছাড়া সাহিত্যও ম্লান হয়ে পড়ে।
আলোচনার পর অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।
সেমিনারে সমাপনী বক্তব্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিরদৌস আজিম সাহিত্যে ও রাজনৈতিক চর্চায় বিপ্লবী ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।