শিরোনাম

।। জীতেন বড়ুয়া।।
খাগড়াছড়ি, ১০ নভেম্বর ২০২৫ (বাসস): খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-সাজেক সড়কের উন্নয়নে ৩৫ কোটি টাকার সংস্কার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সড়ক ও জনপথ(সওজ) বিভাগ। এ উদ্যোগের ফলে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-সাজেক সড়কে যাতায়াতে তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলা ভোগান্তির অবসান হতে চলেছে। সরু ও অতি বাঁকের কারণে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছিল এ সড়কটি। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটতো ছোট বড় দুর্ঘটনা।
খাগড়াছড়ি সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.মাকসুদুর রহমান বাসসকে বলেন, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা-সাজেক সড়ক প্রশস্তকরণে ৩৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সংস্কার প্রকল্প হাতে নিয়েছে সওজ। ইতোমধ্যে দরপত্র শেষে কার্যাদেশও দেওয়া হয়েছে। সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয়েছে। সবকিছু অনুকূল থাকলে ২০২৬ সালের মার্চ মাসে সড়কটির সম্প্রসারণ কাজ শেষ হবে।
তিনি বলেন, ‘খাগড়াছড়ি-দীঘিনালার রাস্তাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। রাস্তাটি দিয়ে ছোট- বড় যানবাহনের পাশাপাশি অনেক পর্যটকবাহী যানও চলাচল করে। তাই দুর্ঘটনা রোধে জেলা সদরের খাগড়াপুর থেকে দীঘিনালা বাস স্টেশন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে।’
খাগড়াছড়ি সওজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯৮০ সালে নির্মিত এসব সড়ক অপ্রশস্ত হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হয়। উঁচু নিচু সরু সড়কে ট্রাক, বাস ও পর্যটকবাহী যানবাহন চলাচলে ভোগান্তিতে পড়ে চালক ও যাত্রীরা। সাজেকগামী পর্যটকবাহী যানবাহন সড়কে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায় বেড়েছে ভোগান্তিও। যার কারণে আঁকাবাঁকা সরু সড়কে যাতায়াতে সময় লাগে বেশি। সড়ক ছোট হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। সড়ক প্রশস্তকরণ স্থানীয় মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। অবশেষে সড়কটির দুই পাশে ছয় ফুট বড় করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সাজেক পর্যটন কেন্দ্রসহ দীঘিনালা, বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলার মানুষও এই পথে যাতায়াত করে। কিন্তু ১২ ফুট প্রশস্ত ১৮ কিলোমিটারের এ সড়কে বাঁক রয়েছে ৫২টি। ভৌগোলিক গঠনের কারণে খাগড়াছড়ির অধিকাংশ সড়ক আঁকাবাঁকা।
দীঘিনালা হাসিনসনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা প্রতিভা ত্রিপুরা বাসসকে বলেন, ‘বাচ্চাকে রাস্তার পাশ দিয়ে স্কুলে আনা-নেওয়ার সময় ভয়ে থাকি। সরু রাস্তায় দুইটা গাড়ি আসলে সাইড দিতে গিয়ে রাস্তার বাইরে নেমে যেতে হয়। রাস্তাটা প্রশস্ত হলে রাস্তার পাশ ধরে আমরা সাধারণ পথচারীরা হাঁটতে পারতাম। বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতেও স্বস্তি পেতাম।’
দীঘিনালা নয়মাইল এলাকার সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য গণেশ ত্রিপুরা বাসসকে বলেন, রাস্তার পাশ দিয়ে চলাফেরার সময় আতঙ্কে থাকি। কখন গাড়ি এসে মেরে দেয়।
বাঁক ও উঁচু-নিচু সড়কের কারণে বাঁশ ও কাঠ বোঝাই ট্রাক প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যাত্রীবাহী বাসও দুর্ঘটনার শিকার হয়। সড়কটি বড় হলে আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হবে।
জিপগাড়ি চালক মো. জসীম উদ্দিন বলেন, রাস্তাটি অত্যন্ত ছোট। বড় কোনো গাড়ি আসলে রাস্তা থেকে নেমে যেতে হয়। একটি গাড়িকে ক্রস করার মতো জায়গা নেই। বাঁক ও উঁচুনীচু সড়কের কারণে বাঁশ ও কাঠ বোঝাই ট্রাক প্রায়ই দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। রাস্তাটি প্রশস্ত হলে সবার ভালো হয়।
চাঁন্দের গাড়ির (জিপ) চালক প্রদীপ ত্রিপুরা ও নিমাই দেবনাথ বলেন, ১৮ কিলোমিটার সড়কে ছোট-বড় বাঁক আছে ৬০টিরও বেশি। এ পথে যাতায়াতে সময় লাগে ৪০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টা। এই সড়কে জেলার অন্যান্য সড়কের তুলনায় যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বেশি। সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ শেষ হলে আমাদের দীর্ঘ দিনের ভোগান্তি দূর হবে।’

খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহণ মালিক গ্রুপ এর সভাপতি মো. আসলাম কালু বাসসকে বলেন, ‘খাগড়াছড়িতে এখন গাড়ির চাপ বেড়েছে। সাধারণত জেলা মহাসড়ক ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকার নিয়ম থাকলেও এই সড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১২ ফুট। সড়কে অতিরিক্ত বাঁকের কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তা প্রশস্ত করলে বাঁকের পরিমাণ কমে আসবে। চালকেরা গাড়ি চালিয়ে স্বস্তি পাবেন। দুর্ঘটনাও কমে আসবে।