বাসস
  ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:০২

বর্ষা শেষেও কুড়িগ্রামে থামছে না নদীভাঙন 

ছবি : বাসস

শফিকুল ইসলাম বেবু

কুড়িগ্রাম, ৬ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বর্ষা শেষ হলেও থামছে না কুড়িগ্রামের নদ-নদীর ভাঙন। জেলার ১৬ নদ-নদীর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের ভাঙন এখন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত এক মাসে পাঁচ শতাধিক পরিবারের বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

দুধকুমার নদের ভাঙনে নাগেশ্বরী উপজেলার টেপারকুটি, কুড়িগ্রাম সদরের ঘোগাদহ ইউনিয়নের খাড়ুয়ারপাড় ও সবুজপাড়া, যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে রৌমারী উপজেলার চর শৌলমারী ইউনিয়নের সুখের বাতি, সোনাপুর ও হবিগঞ্জ গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে চর শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাইদুর রহমান বলেন, ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে সোনাপুর, সুখের বাতি ও হবিগঞ্জ গ্রামের দুই শতাধিক পরিবার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। প্রতিদিন আশ্রয়ের খোঁজে অসহায় মানুষ আমার বাড়িতে ভিড় করছে। খাবারের সংকটও দেখা দিয়েছে।

যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, বানিয়াপাড়ায় শতাধিক পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে নদী ভাঙনে। এবারের ভাঙন আগের বছরের তুলনায় ভয়াবহ।

সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের সদস্য খোরশেদ আলম বলেন, দুধকুমার নদীর ভাঙনে খাড়ুয়ারপাড় ও সবুজপাড়ার শতাধিক পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে উদ্বাস্তু। এখনো ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ খ ম ওয়াজিদুল কবির রাশেদ বলেন, কেদার ইউনিয়নের টেপারকুটি গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু কিছু এলাকায় ভোরের আলো ফোটার আগেই নদীর পাড়ে জড়ো হচ্ছেন ভাঙনকবলিত মানুষ। কেউ ঘর সরাচ্ছেন, কেউ গাছ কাটছেন। এ সময় অনেকে বলেন, উজানের ঢলে সামান্য পানি বাড়লেই পাড় ভেঙে পড়ছে। দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার তীব্র স্রোতে ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদীগর্ভে।

নাগেশ্বরী উপজেলার সবুজপাড়ার শরীফ উদ্দিন বলেন, আমাদের ঘর নদীর তীর থেকে অনেক দূরে ছিল। ভেবেছিলাম এবার রেহাই পাব কিন্তু এক রাতেই সব গিলে নিল নদী।

এভাবেই অনেক মানুষ এখন ঘরহারা হয়ে পড়েছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউবা খোলা আকাশের নিচে অস্থায়ী ছাউনি বানিয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

কুড়িগ্রামের সদর, নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী ও রৌমারী উপজেলার অন্তত ১০টি স্থানে নতুন করে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন জানান, চলতি বছর ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, ধরলা, তিস্তা ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে সাড়ে ১৫শ পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে।

কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি বলেন, নদীভাঙনের কারণে চরাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধ করতে পারলে তাদের কষ্ট অনেকটা কমবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, ভাঙনকবলিত এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম। পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলে স্থায়ীভাবে কাজ করা সম্ভব হবে।