শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আয়োজিত সেমিনারে বক্তারা প্রথাগত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার বিকল্প যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে অ্যামেচার বা হ্যাম রেডিও এর কারিগরি দিক, লাইসেন্স প্রক্রিয়া ও দুর্যোগকালীন পূর্বপ্রস্তুতির গুরুত্ব তুলে ধরার পাশাপাশি অ্যামেচার রেডিও কার্যক্রম আরো সংগঠিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে কমিশনের কার্যালয়ে বন্যা, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন অ্যামেচার/হ্যাম রেডিও এর ভূমিকা শীর্ষক গুরুত্বপূর্ণ এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে সারাদেশ থেকে শতাধিক অ্যামেচার রেডিও অপারেটর অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারী লাইসেন্সিগণ তাদের রেডিও ইকুইপমেন্ট, স্যাটেলাইট সরঞ্জামাদি, ওয়াকিটকি এবং ট্রান্সমিটারসমূহ প্রদর্শন করেন।
তারা জানান, ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার সময় মোবাইল নেটওয়ার্ক এবং ইন্টারনেট সেবা ব্যাহত হলেও হ্যাম রেডিও স্বতন্ত্র ফ্রিকোয়েন্সিতে সচল থাকায় সংকটকালে জরুরি তথ্য আদান-প্রদান, উদ্ধার তৎপরতা সমন্বয় এবং প্রশাসনকে সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কমিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ইকবাল আহমেদ বলেন, ফেনীর বন্যা পরিস্থিতে নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন এলাকায় অ্যামেচার রেডিও অপারেটরগণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। দুর্যোগকালীন কিংবা শান্তিপূর্ণ সময়ে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে সমন্বিতভাবে কার্যক্রম গ্রহণ, নিজেদের সুসংগঠিত ও দক্ষ করে গড়ে তোলার পরামর্শ দেন তিনি।
কমিশনের স্পেকর্ট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক দূর পাল্লায় টেলিযোগাযোগের ইতিহাস, হ্যাম তথা অ্যামেচার রেডিও এর আর্বিভাব, রেগুলেশন ও বিভিন্ন দেশে দুর্যোগকালীন এর অবদান তুলে ধরেন। তিনি অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদেরকে বাংলাদেশের দুর্যোগের ধরণ অনুযায়ী দলভিত্তিক কার্যক্রম সম্পাদন, সচেতনতামূলক কর্মশালা আয়োজন এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার পরামর্শ প্রদান করেন। অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজতর করার কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও তিনি জানান।
অ্যামেচার রেডিও অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এআরএবি) ও অ্যামেচার রেডিও সোসাইটি অব বাংলাদেশ (এআরএসবি) এর প্রতিনিধিগণ সেমিনারে তাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা উপস্থাপনের মাধ্যমে অ্যামেচার রেডিওকে দুর্যোগ প্রটোকলে অন্তর্ভূক্তকরণ, রিসিভার আমদানিতে কাস্টমস জটিলতা দূরীকরণ, অনলাইনের মাধ্যমে লাইসেন্স সহজীকরণ, সরকারি বিভিন্ন সংস্থা থেকে দুর্যোগকালীন প্রথম রেসপন্সকারী হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি, ক্লাব কল সাইন প্রদান ও রিপিটার নেটওয়ার্কের আওতায় সারাদেশকে সংযুক্তকরণের বিষয়ে সহযোগিতা কামনা করেন।
সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মাহমুদ হোসেন বলেন, বিটিআরসি’র পক্ষ থেকে অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদেরকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। অবৈধ ওয়াকিটকি পরিহার করে বিটিআরসি নীতিমালার আলোকে রেডিও ইকুইপমেন্ট ক্রয় এবং ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া, সেমিনারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
বাংলাদেশে ১৯৭৯ সালে অ্যামেচার রেডিওর যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের পর এটি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি লাভ করে। বিটিআরসি হতে অদ্যাবধি ৮১৩ জনকে অ্যামেচার রেডিও লাইসেন্স পরীক্ষার মাধ্যমে কল-সাইন প্রদান করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৫ সালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৩৬৫ জনের লাইসেন্স ও কল-সাইন প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রথম দিকে অ্যামেচার রেডিওর কার্যক্রম শখের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর এর ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। ১৯২৫ সালে অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের জন্য আন্তর্জাতিক অ্যামেচার রেডিও ইউনিয়ন (আইএআরইউ) গঠিত হয় এবং প্রতি বছর ১৮ এপ্রিল আন্তর্জাতিক অ্যামেচার রেডিও দিবস পালন করা হয়।