শিরোনাম
ঢাকা, ২৯ জুলাই, ২০২৫ ( বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি সংস্কারে ভয় পায় না, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম যদি মানুষের প্রয়োজনে না আসে, মানুষের নিরাপত্তা দিতে না পারে, তবে সে সংস্কার কোনো কাজে আসবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা যে পরিবর্তন চাচ্ছি, সংস্কার চাচ্ছি, সেই সংস্কার কাঠামো যদি মানুষের সার্বিক উপকারে না আসে, তাহলে সেই সংস্কার আমাদের শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারবে না। শিশুদের জন্য একটা নিরাপদ ও সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে না পারলে, আজকের সংস্কারের স্লোগান কোনো কাজে আসবে বলে আমি মনে করি না।’
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউ মাঠে ‘গণতান্ত্রিক পদযাত্রায় শিশু’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মির্জা ফখরুল।
‘আমরা বিএনপি পরিবার’ আর ‘মায়ের ডাক’ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে গুমের শিকার বিভিন্ন ব্যক্তি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হওয়া শিশুদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম, পরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শিশুদের (গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্তান) পুনর্বাসনের জন্য একটি স্পেশাল সেল গঠন করবে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, কাজটি হয়নি। আশা করেছিলাম, দেরিতে হলেও অন্তর্বর্তী সরকার তাদের জন্য কিছু করবে। কিন্তু এখনো কিছু করা হয়নি।’
গুম হওয়া মানুষের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘একটি কমিশন করা হয়েছে। এই কমিশন এখন পর্যন্ত একটা রিপোর্ট নাকি করেছে। কিন্তু তাদের (গুম হওয়া ব্যক্তি) খোঁজ করা, এ বিষয়ে খুব বেশি কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে মনে হয় না। আশা করবো সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে।’
বিএনপি’র মহাসচিব ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বলেন, ‘গুমের শিকার পরিবারগুলো যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, আমরা কিন্তু সেই ত্যাগ অনেকেই করতে পারিনি। যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে শিশুদের বলতে শুনি যে, আমি আমার বাবাকে দেখতে চাই, বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চাই, ঈদের মাঠে নামাজ পড়তে যেতে চাই- তখন আমি আর আমার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।’
পটপরিবর্তনের পর শিশুদের জন্য তেমন কিছু করা হয়নি উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমরা অনেকেই বড় বড় পদে বসে গেছি। অনেকে মন্ত্রী (উপদেষ্টা) হয়েছি, বড় কর্মকর্তা হয়েছি, অনেকে বড় বড় ব্যবসা নিয়েও এগিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এই শিশুদের কথা ঠিক সেইভাবে সামনের দিকে আনতে পারিনি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি এটুকু কথা দিতে পারি, জনগণের ভোটে যদি আগামী নির্বাচনে আমরা (বিএনপি) সরকার গঠন করতে পারি, তাহলে আমাদের নেতা তারেক রহমান কথা দিয়েছেন যে, এই শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য তিনি কাজ করবেন। আমরা সেই কথাটা আবারও উচ্চারণ করতে চাই।’
অনুষ্ঠানে অংশ নেন গুমের শিকার বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী।
‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘হাসিনার ফ্যাসিজমের ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল। যারা পিতামাতাকে হারিয়েছেন, আমাদের কষ্টের জায়গা এক। তাই আমরা একসঙ্গে হয়েছি।’
‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোর্শেদ হাসানসহ গুমের শিকার বিভিন্ন ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা।
এ সময় দুই সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।