বাসস
  ২৮ জুলাই ২০২৫, ১৭:২০

চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে বেকায়দায় ফেলা যাবে না: মির্জা ফখরুল 

সোমবার সকালে শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী যুব দলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বক্তব্য দেন। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ঢাকা, ২৮ জুলাই, ২০২৫ ( বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চাপ সৃষ্টি করে বিএনপি’কে বেকায়দায় ফেলা যাবে না।  

তিনি বলেন, ‘আজকে যারাই চেষ্টা করুন না কেনো, আমাদেরকে (বিএনপি) বেকায়দায় ফেলার জন্য বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করে কোনো লাভ হবে না।’

আজ সোমবার সকালে শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী যুব দলের এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে আমাদের সামনে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব যে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে নতুন বাংলাদেশ গড়বার, আমরা সেই নতুন বাংলাদেশ গড়তে চাই। 

তিনি বলেন, একটা স্লোগান দিয়েছেন আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান- ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এটার অর্থ কী? এটার অর্থ আমরা কারো কাছে মাথা নত করব না, আমরা অন্য কোনো দেশের দিকে তাকিয়ে থাকব না। 

মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘এই দেশের মানুষ লড়াই করেছে, লড়াই করতে জানে, লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছে, লড়াই করে গণতন্ত্র রক্ষা করেছে এবং দেশকে মুক্ত করেছে।’

শাহবাগ চত্বরে জাতীয়তাবাদী যুব দলের উদ্যোগে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘গ্রাফিতি অঙ্কন’ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। 
অনুষ্ঠানে বিএনপি’র মহাসচিব নিজে রং তুলি নিয়ে স্ক্যানভাসে গ্রাফিতি আঁকার মধ্য দিয়ে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে নতুন বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে হবে, যেই বাংলাদেশে যুবদল, ছাত্রদল ও বিএনপি’র দিকে তাকিয়ে সাধারণ মানুষ যেন বলে- ‘এরা ভালো মানুষ, ভালো দল’।

তিনি আরো বলেন, একটা কথা আছে ইংরেজিতে ‘পাবলিক পারসেপশন’ জনমত, জনগণের ধারণা এটাই কিন্তু রাজনীতির মূল নিয়ামক। 

তিনি বলেন, জনগণ কী ভাবছে? এই যে আমার ভাই ওখানে ভ্যানে ফল বিক্রি করছেন, রিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রিকশা চালাচ্ছেন অথবা যিনি সবজি বিক্রি করছেন- তিনি কী ভাবছেন? আপনারা কি কখনো তাদের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছেন যে, ভাই যুদ্ধ তো একটা হয়ে গেলো। আমরা হাসিনাকে তাড়ালাম, এই যে গ্রাফিতি করছি, বড় বড় বই ছাপাবো, আপনার মতামতটা কী? বাংলাদেশের পরিবর্তনটা কী হলো?- তা জিজ্ঞাসা করেন তাকে।

তিনি বলেন, যদি সত্যিকার অর্থে এই দেশকে পরিবর্তন করতে চান, তাহলে জনসাধারণকে জিজ্ঞাসা করতে হবে যে, সে কী চায়? আমার ভ্যান চালক কী চায়, তার অবস্থার কতটা পরিবর্তন হয়েছে? আমার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ব্যবসার কতটা পরিবর্তন হয়েছে। আজকে এই কথাগুলো বলছি এ জন্য যে, আজকে এর প্রয়োজন এসে গেছে।

সংস্কার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সারাক্ষণ সংস্কার কর্মসূচির সঙ্গে সহযোগিতা করছি, আমরা সারাক্ষণ সবাইকে নিয়ে কাজ করতে চাই।’

হাসিনার বিচার শুরু হলো না কেনো?- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, ‘এক বছর হয়ে গেলো হাসিনার বিচার কাজ শুরু হলো না কেনো? এখনো পর্যন্ত সেই সমস্ত হত্যাকারীদের, যারা প্রকাশ্যে হত্যা করেছে, বিবিসির প্রতিবেদনে অডিওতে দেখাচ্ছে যে,  হাসিনা নির্দেশ দিয়েছে গুলি করো-এগুলো কেনো এখন পর্যন্ত আসেনি?’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে তর্ক-বির্তক করছি, এমন কতগুলো বিষয় নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে কোন্দলে লিপ্ত হয়েছি, যা বাংলাদেশকে আরও পিছিয়ে দিতে পারে। ফ্যাসিস্টদের শক্তি যোগাতে পারে, ফ্যাসিস্টদের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে আবার নতুন করে বাংলাদেশের ওপর চেপে বসার।’

গত ১৫ বছরের বিএনপি’র নেতা-কর্মীদের ওপর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নিপীড়ন নির্যাতনের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, এই জুলাইয়ের আন্দোলনে যুবদলের ৭৯ জন শহীদ হয়েছেন, ছাত্রদলের ১৪২ জন শহীদ হয়েছে। শুধু কয়েকটি দল, কয়েকজন ছেলে-ছাত্র নয়, শিশু থেকে শুরু করে নব্বইয়ের বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত সেদিন রাস্তায় নেমে এসেছিল। 

তিনি বলেন, ‘এই যে ত্যাগ, ২ হাজারের ওপরে মানুষ হারালাম, ছেলেদের হারালাম, আমাদের নেতা-কর্মীরা পঙ্গু হলো, চোখ হারালো তার একটাই তো লক্ষ্য, লক্ষ্যটা হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বিদায় করে এই দেশে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, একটা ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা করা।’

৫ সমন্বয়কারী গ্রেফতারের খবরে বেদনায় নীল হয়ে গেছি উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে যখন পত্রিকায় দেখলাম, বেদনায় একেবারে নীল হয়ে গেছি। দেখলাম পাঁচ জন সমন্বয়কারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তারা জোর করে একটি বাড়ি থেকে একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে নিয়েছে।

যুবদলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘গোটা বাংলাদেশ তোমাদের দিকে চেয়ে আছে। তরুণ-যুবক যারা বদলে দিয়েছে, যারা পাল্টে দিয়েছে, সেই হাসিনার ক্ষমতার পতন ঘটিয়ে যারা তাকে দেশ থেকে বিতাড়িত করে দিয়েছে, তাদেরকেই তো এদেশ গড়ে তুলতে হবে। তাদেরকেই তো এদেশকে নির্মাণ করতে হবে, তাদেরকে ভবিষ্যতে একটা সুন্দর বাংলাদেশ তৈরি করতে হবে ন্যায্যতার ভিত্তিতে, মানবতার ভিত্তিতে।’