শিরোনাম
চাঁদপুর, ২৩ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘দিন শেষে আমাদেরকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। গতকাল আপনারা দেখেছেন ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ লাশের ওপর দিয়ে রাজনীতি করার অপচেষ্টা করেছে।’
আজ বুধবার দুপুরে চাঁদপুর শহরের বাসস্ট্যান্টে এনসিপির দেশব্যাপী ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
হাসনাত বলেন, আওয়ামী লীগের অধ্যায় শেষ। আওয়ামী লীগ যদি আবারও ফেরার চেষ্টা করে তাহলে এই শোক শক্তিতে পরিণত হয়ে তাদের ভবিষ্যতের সম্ভাবনাকেও বন্ধ করে দেয়া হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এনসিপির চাঁদপুর জেলার প্রধান সমন্বয়ক মো. মাহবুব আলম। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বক্তব্য দেন মূখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী, মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা সারমিন।
আরও বক্তব্য দেন এনসিপির যুগ্ম মূখ্য সমন্বয়ক মো. মাহবুব আলম ও মো. মিরাজ মিয়া এবং ফরিদগঞ্জ উপজেলা এনসিপির আহবায়ক মাহবুব তালুকদার।
হাসনাত আবদুল্লাহ ভবিষ্যত বাংলাদেশ সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। আমরা একসঙ্গে একটি সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করব। যে বাংলাদেশে গুম, খুন হবে না, চিকিৎসার নিশ্চিয়তা থাকবে, সন্তানরা স্কুলে গেলে বিল্ডিং ভেঙে পড়বে না।’
তিনি বলেন, রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাহরীন চৌধুরীকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিতে পারিনি। এটি আমাদের ব্যর্থতা। তিনি ২০ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে নিজের জীবন দিয়েছেন।
নাসীরুদ্দিন পাটওয়ারী বক্তব্যে বলেন, ‘চাঁদপুরে আমার জন্ম এবং এখানকার মাটিতেই আমাকে মিশে যেতে হবে। আল্লাহ ছাড়া আমরা কাউকে ভয় পাই না। কেউ যদি ষড়যন্ত্র করে আমাদেরকে বার বার হত্যা এবং খুন করতে আসে ততবার আমরা জেগে উঠে বলবো- বাংলাদেশে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার মত স্বৈরাচার কায়েম হতে দিব না। চাঁদপুরে কোনো চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস ও বালু খেকোদের প্রশ্রয় দেয়া হবে না।’
তিনি বলেন, চাঁদপুরের অনেক গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করার কারণে বহু মানুষ তাদের বসতবাড়ি হারিয়ে বিভিন্ন স্থানে ছিন্নমূল হয়ে বসবাস করছে। এসব মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে হলেও আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা চাঁদপুরকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকুন।
এনসিপির মূখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক মতভেদ থাকতে পারে। আওয়ামী লীগ এবং তাদের দোসররা আমাদের মধ্যে ঢুকে অরাজকতা সৃষ্টি করবে সেই সুযোগ আমরা আর এই বাংলাদেশে দেব না। আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও নাম ভিন্ন হতে পারে। আমরা বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন নামে রাজনৈতিক লড়াই করতে পারি। যদি আওয়ামী লীগের প্রশ্ন আসে, তাহলে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সকল সন্ত্রাসীদের প্রতিহত করবো।’
সংগঠনের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক সামান্তা সারমিন বলেন, বিমান দুর্ঘটনার পরবর্তী সময়ের ঘটনাগুলো কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। আমরা সবাই শোকাহত দিন পার করছি। জুলাই পদযাত্রা এই পর্যায়ে এসে শোক পদযাত্রায় পরিণত হয়েছে।
তিনি চাঁদপুরবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনাদের এই মাটিতে কয়জন ব্যক্তি শহীদ হয়েছেন। আপনারা এই শহীদ মায়েদের আর্তনাদ শুনেছেন। বাংলাদেশের উর্বর মাটি শহীদদের রক্তে রঞ্জিত। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে কতদিন পর্যন্ত এই শহীদদের রক্তের মর্যাদা ভূলুন্ঠিত হবে।
পদযাত্রা অনুষ্ঠান শেষে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফেরাত ও আহতদের সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন এনসিপির চাঁদপুর জেলা কমিটির সদস্য মুফতি মাহমুদুল হাসান।
পদযাত্রার পূর্বে এনসিপি নেতারা চাঁদপুর সার্কিট হাউজ থেকে একটি শোক র্যালি নিয়ে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক সড়ক হয়ে পদযাত্রা স্থলে এসে উপস্থিত হন। এর আগে চাঁদপুর সার্কিট হাউস সভা কক্ষে জুলাই আন্দোলনের শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
এদিকে চাঁদপুর শহরে অনুষ্ঠান শেষে এনসিপি নেতারা হাজীগঞ্জ উপজেলা সদরের চৌরাস্তা বিশ্ব রোড এলাকায় শহীদ আজাদ সরকার চত্ত্বর উদ্বোধন করেন। সর্বশেষ শাহরাস্তি উপজেলার দোয়াভাঙ্গা এলাকায় পথসভা করেন। সেখানে বক্তব্য দেন মূখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। অনুষ্ঠান শেষে এনসিপির কেন্দ্রীয় নেতারা কুমিল্লার উদ্দেশ্যে সড়ক পথে চাঁদপুর ত্যাগ করেন।