বাসস
  ১৮ জুলাই ২০২৫, ২২:২৮

ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে হবে : সালাহউদ্দিন

ঢাকা, ১৮ জুলাই ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, 'একটি মহল ফ্যাসিবাদ ফিরিয়ে আনার পাঁয়তারা করছে। আমাদের সজাগ থাকতে হবে আজকের এই বাংলাদেশে আমাদের গতিপথ নির্ধারিত হবে জনগণকে সাথে নিয়ে, ঐক্যবদ্ধভাবে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করতে হবে।'

মিরপুরের পল্লবীতে মিছিলপূর্ব এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আজ এসব কথা বলেন। 

জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে সারাদেশে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে মিরপুরের পল্লবীর বিআরটিসির বাস ডিপোর সামনে থেকে মৌন মিছিলের কর্মসূচি পালন করা হয়।  

সালাহউদ্দিন বলেন, ‘শহীদের রক্তস্নাত বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদের কোনো ঠাঁই নাই। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-গণতন্ত্রের ওপর কোনো শকুনি কখনই থাবা দিতে পারবে না।'

‘বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করা একটি দল এবার ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে’ অভিযোগ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'যে দলটি সবসময় বাংলাদেশে  বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করেছে। এক সময়ে স্বাধীনতার বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময় জনগণের বিরুদ্ধে গেছে, আরেক সময়ে মানুষের সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে গেছে। তারা সবসময় বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করে।'

আরেকটি দলের কথা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যারা ন হাতপাখা দিয়ে ১৬ বছর আওয়ামী লীগকে বাতাস করেছে তারা নাকি কোথাও পিআর পদ্ধতি ছাড়া নির্বাচন চায় না। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে আরেকটি দল যে সবসময় বিভ্রান্তিমূলক রাজনীতি করেছে।

আর কখনো দেশে ফ্যাসিবাদে ঠাই হবে না উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আজকে যারা  নতুন নতুন বাক্য বিশারদ হয়েছেন রাজনীতিতে তাদের উদ্দেশ্যে নসিহত করছি যারা নতুন করে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখছেন, এই স্বপ্ন দেখা ভালো। কিন্তু মনে রাখতে হবে কেউ যদি দেশে নির্বাচনকে পিছিয়ে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে এবং নির্বাচন না করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে চায় অথবা বিভিন্ন রকমের ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের ষড়যন্ত্র করতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে হচ্ছে ফ্যাসিবাদের দোসরা যেন আবার  পুনর্বাসিত হয়।

তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগ এবং ফ্যাসিস্টদের রাজনীতি হয়েছে বাংলাদেশে ঢাকায় এই মিরপুরে, গুলিস্তানে, পল্টনে কিন্তু দাফন হয়েছে দিল্লিতে। সুতরাং যারা শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার ফিরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন রকমের ষড়যন্ত্র এবং প্লট সৃষ্টি করছে তাদেরকে আমরা চিহ্নিত করব।'

তিনি বলেন, ‘এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের একমাত্র দায়িত্ব একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, নিরপেক্ষ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপহার দেয়া।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কেবল দুইটি ম্যান্ডেট। একটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন। কেবল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় অনুরোধ করলে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দিতে হয়। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে সেটা পরিচালিত হয়। সুতরাং যারা বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে চায় অথবা অনিশ্চিত করতে চায় তারাই বক্তব্য দিচ্ছে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে হতে হবে এই কেয়ারটেকার বা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে।'

এ দেশের জনগণ ‘পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন’ বুঝে না বলে মন্তব্য করেন সালাহ উদ্দিন।

‘জাতীয় সনদ প্রসঙ্গে’ সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘যারা আজকে সংস্কার কমিশনে গিয়ে আলোচনা করছে খানাপিনা করছে সন্ধ্যা বেলায় চলে যাচ্ছে এবং কোন সিদ্ধান্ত দিচ্ছে না তারা কারা? তারা কেউ ১৩ দল কেউ ১৪ দল কেউ বিভিন্ন রকমের দল যারা আওয়ামী লীগের সাথেও বিভিন্ন সময় সংযোগে ছিল। তাদের বক্তব্য শুনে যদি সংস্কার কমিশনে সিদ্ধান্ত নিতে হয় তবে সেটা হবে জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।'

তিনি বলেন, ‘সংস্কারের বিষয়ে আমাদের উপরে দোষ চাপানোর চেষ্টা চলছে অবিরাম। বিএনপির কারণে নাকি সংস্কার হচ্ছে না। এক এক করে প্রতিদিন সাংবাদিক বন্ধুদের বলছি প্রত্যেকটা ঐক্যমতে আসার পিছনে বিএনপির পরামর্শই নিতে হচ্ছে। বিএনপি প্রত্যেকটা ঐকমত্য পোষণের জন্য এগিয়ে আসছে। যেহেতু আমাদের এই প্রস্তাব হচ্ছে ৩১ দফা প্রস্তাব জাতির জন্য সংস্কারের। আমরা এই জাতির সম্মুখে ৩১ দফা প্রদান করেছিলাম যা আমাদের নেতা জনাব তারেক রহমান জাতির সামনে উপস্থাপন করেছিলেন।'

তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের সাথে বসছি, আলাপ করছি, সমাধানে যাচ্ছি, ঐকমত্যে পৌঁছাচ্ছি, এইভাবে আমরা একদিন এই সনদ তৈরি করতে পারব। তবে এই কথা সত্য শতকরা শতভাগ প্রস্তাবে হয়ত গণতন্ত্রের মধ্যে সবাই একমত হতে নাও পারে। সেইটাই আমাদের জন্য গণতন্ত্রের সৌন্দর্য।'

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, সদস্য সচিব মোস্তফা জামান, সেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।