শিরোনাম
ঢাকা, ১৬ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও ইন্টারনেট সোসাইটি ফাউন্ডেশন এর যৌথ উদ্যোগে “কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতার মাধ্যমে প্রতিবন্ধী যুবদের ক্ষমতায়ন” শীর্ষক একটি ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত হয়।
বিশ্ব যুব দক্ষতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে মঙ্গলবার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতেই এই ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করা হয়।
জুম প্ল্যাটফর্মে আয়োজিত এই ওয়েবিনারটি ফেসবুক লাইভেও সম্প্রচারিত হয় এবং সারাদেশ থেকে ১৮৯ জন অংশগ্রহণকারী যার মধ্যে ছিলেন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অভিভাবক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সংগঠন ও মূলধারার এনজিও প্রতিনিধিরা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আলবার্ট মোল্লা বলেন, “চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। এই প্রযুক্তিগুলি দ্রুত আমাদের পেশাগত এবং ব্যক্তিগত জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠছে।”
তিনি জানান, প্রতিবন্ধী তরুণদের, বিশেষ করে গুরুতর প্রতিবন্ধী যুবদের জন্য ডিজিটাল দক্ষতা বৃদ্ধি করতে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ও ইন্টারনেট সোসাইটি ফাউন্ডেশন একত্রে কাজ করছে। এর আওতায় ডিজিটাল মার্কেটিং, গ্রাফিকস ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট এবং অ্যাপ ডেভলপমেন্টের মতো বিষয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী যুবকদের ডিজিটাল অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সংগঠনের হেড অব প্রোগ্রাম মো. সোহেল রানা তাঁর বক্তব্যে এআই ও ডিজিটাল দক্ষতার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি এ সংক্রান্ত জাতীয় পরিসংখ্যানের ওপর আলোকপাত করেন।
ওয়েবিনারে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় সফলভাবে ক্যারিয়ার গড়ার পথে এগিয়ে চলা চার প্রতিবন্ধী যুবক-যুবতী তাদের প্রেরণাদায়ক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা উপস্থিত সবাইকে অনুপ্রাণিত করে। রাইহানুল ইসলাম রংপুর এর একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী তরুণ, বর্তমানে ছয় মাস মেয়াদি ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্সে ভর্তি আছেন। পাশাপাশি তিনি নিজেই একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র পরিচালনা করছেন, যেখানে সুবিধাবঞ্চিত যুবকদের ডিজিটাল দক্ষতা শেখাচ্ছেন।
রুপালি আক্তার, ময়মনসিংহ এর শারীরিক প্রতিবন্ধিতাসম্পন্ন যুবতী, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও এআই ব্যবহার করে নিজের ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং এর মাধ্যমে অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর হয়েছেন।
মো. ইমতিয়াজুল ইসলাম, বান্দরবানের একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যুবক, অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট কোর্সে অধ্যয়নরত। দুই চোখে না দেখতে পেলেও কোডিংয়ের জগতে তার এগিয়ে চলা সত্যিই অনুপ্রেরণার।
উজ্জ্বল ভট্টাচার্য, সিলেটের শারীরিক প্রতিবন্ধী যুবক, গ্রাফিক ডিজাইন কোর্সের শিক্ষার্থী এবং পাশাপাশি একজন প্রতিভাবান কনটেন্ট রাইটার হিসেবেও পরিচিত।
চ্যালেঞ্জসমূহ আলোচনার সময়, ডিজিটাল অর্থনীতিতে প্রতিবন্ধী তরুণদের অংশগ্রহণকে বাধাগ্রস্ত করে এমন বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হলো -স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং সহায়ক প্রযুক্তির সীমিত প্রাপ্তি; প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলোর প্রবেশগম্যতার অভাব; পাঠ্যসামগ্রীতে ব্রেইল, বড় অক্ষর, ইশারা ভাষা দোভাষী এবং স্ক্রিন-রিডার উপযোগী ফরম্যাটের অভাব; পরিবার ও সমাজের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি; ইন্টারনেট এবং ডিভাইসের উচ্চ মূল্য; প্রশিক্ষকদের মাঝে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ক সচেতনতার অভাব; জাতীয় কৌশলগত পরিকল্পনায় প্রতিবন্ধী যুবকদের কার্যকর অন্তর্ভুক্তির ঘাটতি উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে উঠে আসে।
ওয়েবিনার থেকে প্রাপ্ত সুপারিশসমূহ হলো -এআই এবং ডিজিটাল দক্ষতার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রবেশগম্য উপায়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি করা। সহায়ক প্রযুক্তি এবং উপযোগী ব্যবস্থা সহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দক্ষতা উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করা। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক এবং সরকারি প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে অন্তর্ভুক্তিমূলক ডিজিটাল দক্ষতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) নীতিমালায় প্রতিবন্ধীবান্ধব ডিজিটাল দক্ষতা উন্নয়নের জন্য অর্থায়নের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা। প্রতিবন্ধী যুবকদের জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ডিজিটাল দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে পৃথক জাতীয় ও বেসরকারি পর্যায়ে কর্মসূচি গ্রহণ। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দ্বারা এবং তাদের জন্য নির্মিত এআই টুলস উদ্ভাবনে গবেষণা ও উন্নয়নের প্রসার।ডিজিটাল খাতে প্রশিক্ষণ পরবর্তী ইন্টার্নশিপ, চাকরি ও উদ্যোক্তাদের সুযোগ তৈরিতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা। অন্তর্ভুক্তিমূলক এআই ও ডিজিটাল দক্ষতাকে এগিয়ে নিতে একটি জাতীয় সমন্বয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
ওয়েবিনারটি সঞ্চালনা করেন অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার এলিজাবেথ ইতি মারান্ডী এবং ইশারাভাষা দোভাষী হিসেবে যুক্ত ছিলেন আফরোজা মুক্তা। সমাপনী বক্তব্যে অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মহুয়া পাল বলেন, “ডিজিটাল যুগে কোনো যুব যেন পিছিয়ে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”