বাসস
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০৩

আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত দিনাজপুরের কৃষকরা  

সবজি চাষ ও ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকরা। ছবি: বাসস

 

রোস্তম আলী মন্ডল

দিনাজপুর, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫(বাসস): জেলার সদর উপজেলার সবজি চাষিরা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ও ফসল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।

দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-এর উপ-পরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. মোস্তাফিজুর রহমান বাসসকে বলেন, দিনাজপুর সদর উপজেলাকে জেলার শস্যভাণ্ডার বলা হয়ে থাকে। এই উপজেলায় অধিকাংশ শস্যই উৎপাদিত হয়। এ বছর জেলার সদর উপজেলাসহ সবগুলো উপজেলায় কৃষকেরা আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষকেরা মৌসুমের শুরুতে আগাম জাতের শীতকালীন সবজি বাজারজাত করে অধিক লাভের আশা করছেন। 

তিনি বলেন, সাধারণত নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসে শীতকালীন সবজি বাজারে আসে। সে সময় আমদানি বেশি থাকায় কৃষকেরা ন্যায্যমূল্য পান না। কিন্তু বর্ষার শেষ দিকে বাজারে সবজির দাম ও চাহিদা দুটোই বেশি থাকে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সবজি চাষিরা এ বছর সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই সবজি চাষযোগ্য উঁচু জমি প্রস্তুত করে সবজি চাষ শুরু করেছে।

সরেজমিনে দিনাজপুর সদর উপজেলার চেহেলগাজী, সুন্দরবন, ফাজিলপুর ও আউলিয়াপুর ইউনিয়ন ঘুরে এই এই চিত্র দেখা গেছে। 

সদর উপজেলার নশিপুর গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম (৪০) বাসসকে জানান, তিনি চলতি বছরে তার ৪৫ শতক জমিতে তিন ভাগে আগাম জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন। এর মধ্যে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, কাঁঠালি বেগুন ও টমেটো চাষ করেছেন।

তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম শেষ এবং আশ্বিন মাস শুরু হতে যাচ্ছে। কিন্তু অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই সবজি ক্ষেতে পানি নিষ্কাশনের জন্য ৩ ফুট পর পর ড্রেন করে পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। 

ফলে সবজি ক্ষেত থেকে বৃষ্টির পানি সহজেই নেমে যাচ্ছে। বৃষ্টির পানিতে যাতে সবজির কোনো ক্ষতি না হয়, সেজন্য সার্বক্ষণিক পরিচর্যার কাজ চলমান রয়েছে।

শহিদুলের সবজি ক্ষেতে আগাম জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, টমেটো ও মুলা গজিয়েছে। তিনি আশা করছেন, আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি সময়ে তার ক্ষেতের সবজি বাজারে বিক্রি করতে পারবেন। এ সময় সবজি বাজারজাত করতে পারলে তিনি ভালো দাম পাবেন এবং লাভবান হবেন। 

সদর উপজেলার দানিহারি গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান(৪৫) বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে আমরা কয়েকজন কৃষক আগাম জাতের এসব শীতকালীন সবজি চাষ করছি। এতেই আমরা সফল হয়েছি। আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করায় আমাদের পরিশ্রম ও খরচ দুইই কমেছে। কিন্তু লাভ বেশি।   এবারও একইভাবে সবজি চাষ করেছি। আশা করছি মৌসুমের আগেই সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাবো।

জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার শিব নগর, আলাদীপুর, খয়েরবাড়ী, দৌলতপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আগাম শীতকালীন সবজির চাষ শুরু হয়েছে। এসব জমিতে এখন শিম, মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, করলা, লাউ, লালশাকসহ বিভিন্ন সবজির চারা রোপণ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। 

কিছু কিছু আগাম শীতকালীন সবজি শিগগিরই বাজারে উঠতে শুরু করবে।  

ফুলবাড়ী উপজেলার আলাদিপুর গ্রামের কৃষক হারুন মিয়ার (৩৫)  সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি এবার ৩০ শতক জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি চাষ করেছেন। ইতোমধ্যেই প্রায় ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে এবং বাজারজাত করা পর্যন্ত খরচ হবে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। কৃষক হারুন আশা করছেন, ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তিনি বাজারে ফুলকপি তুলতে পারবেন।

তিনি বলেন, ‘গত বছর এই জমিতেই এক লাখ ৩০ হাজার টাকার ফুলকপি বিক্রি করেছিলাম। এবার ভালো কিছু আশা করছি। কপির পাশাপাশি শিম ও শসা চাষ করেছি। সবজির ফলনও ভালো হয়েছে।  

একই উপজেলার সুজাপুর গ্রামের সবজি চাষি মো. কেরামত আলী (৪৮) বলেন, তিনি এবার ৬০ শতক জমিতে ফুলকপি, বাঁধাকপি ও মুলাসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো সবজি মৌসুমের শুরুতে বাজারে ওঠানো যায়, তাহলে দাম একটু বেশি পাওয়া যায়। এরই মধ্যে আগাম জাতের শিম, মুলা, লালশাক, পুঁইশাক, করলা, পালংশাক ও টমেটো বাজারে উঠছে। এসব সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন বলে তিনি খুব খুশী।

ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শাহানুর রহমান বলেন, ‘আগাম জাতের সবজি চাষ লাভজনক। তাই অনেক চাষি এই পদ্ধতি অনুসরণ করছেন। এখানকার উৎপাদিত সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যায়। কৃষি বিভাগ আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ ও রোগবালাই দমনে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহযোগিতা করছে।

দিনাজপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আফজাল হোসেন বাসসকে বলেন, চলতি মৌসুমে জেলার ১৩ টি উপজেলায় ২৬ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরমধ্যে আগাম জাতের সবজি চাষের  লক্ষ্যমাত্রা ৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও ৩৬ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে এ বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।