বাসস
  ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬:১৫

শেরপুরে আগাম শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা

ছবি : বাসস

শেরপুর, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস) : জেলায় আগাম শীতকালীন সবজি চাষ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই শেরপুরের বিস্তীর্ণ মাঠ যেন জেগে ওঠে নতুন দিনের আয়োজন নিয়ে। ঘন কুয়াশার চাদর ভেদ করে কৃষকেরা ক্ষেতের পরিচর্যায় নেমে পড়েন। কৃষকেরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সবজি ক্ষেতে স্বপ বুনছেন। এবছর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে শাক সবজির অধিক ফলন হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। অন্যদিকে এসব সবজি নিজ জেলার চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি হবে দেশের বিভিন্ন জেলায়।

শেরপুর সদর ছাড়া নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মুলা, লাউ, টমেটো, লাল শাক ও পালং শাকসহ বিভিন্ন শাক-সবজির চারা রোপণে ব্যস্ত রয়েছেন কৃষাণ-কৃষাণীরা। সেই সাথে আগাম রোপণকৃত সবজির ক্ষেত পরিচর্যাতেও চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে শীতকালীন আগাম কিছু সবজি বাজারেও উঠতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে শেরপুর সদর উপজেলার বেতমারি ঘুঘুরাকান্দি ইউনিয়নের চরখার চর গ্রামের কৃষক সুমন মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এবছর এক বিঘা জমিতে শীতকালীন আগাম সবজি চিচিঙ্গার চাষ করেছি। চিচিঙ্গার চাষ করতে বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। এপর্যন্ত তিনি ৪০ হাজার টাকার চিচিঙ্গা বিক্রি করেছেন। সুমন জানান, চিচিঙ্গার চাষে খরচ বাদে তার ৫০ হাজার টাকার বেশি মুনাফা থাকবে বলে আশা করছেন। 

একই গ্রামের কৃষক শাহীন মিয়া দেড় বিঘা জমিতে চাষ করেছেন শীতকালীন আগাম জাতের পটল। পটল চাষে শাহীনের বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। এপর্যন্ত তিনি ৫০ হাজার টাকার পটল বিক্রি করেছেন। শাহীন জানান, পটল চাষে খরচ বাদে তার ৭০ হাজার টাকার বেশি মুনাফা থাকবে।

শেরপুর সদরের কৃষকেরা জানান, উৎপাদন ভালো হলে স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন জেলায়ও এসব সবজি পাঠানো হবে। এতে কৃষকের আয় বাড়ার পাশাপাশি জেলার সার্বিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা তাদের।

শেরপুর জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এবছর কৃষকেরা শীতকালীন সবজি চাষে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার এবং কীটনাশকের পরিবর্তে ক্ষতিকারক পোকা দমনে ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করছেন। এতে পরিবেশবান্ধব ও বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে এই প্রক্রিয়ায় একদিকে যেমন কৃষি শ্রমিকের প্রয়োজন হচ্ছে না অন্যদিকে কম খরচে অধিক সবজি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

জেলা সদরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদ আনোয়ার জানান, শেরপুরের মাটি ও আবহাওয়া শীতকালীন সবজি চাষের জন্য বেশ উপযোগী। সময়মতো বীজ বপন, পরিচর্যা, অনুকূল আবহাওয়া, সেচ এবং রোগবালাই দমন করতে পারায় বেশিরভাগ ক্ষেতেই ফসলের উৎপাদন ভালো হচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, সুষম সার ও কীটনাশক ব্যবহারে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, চলতি বছর শেরপুর জেলায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। যেখানে এখন পর্যন্ত ৮ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে।