বাসস
  ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৩৩

মাঠেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে আগাম আলু, স্বস্তিতে চাষিরা

ছবি : বাসস

।। রেজাউল করিম মানিক।।

রংপুর, ২১ ডিসেম্বর, ২০২৫(বাসস) : উত্তরের পাঁচ জেলা রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে এবারও কৃষকরা চাষ আগাম আলুর চাষ করেছেন। অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে আগাম আলু চাষ করে লোকসান হয়নি তাদের। বেশির ভাগ ক্ষেতের আলু মাঠেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ভালো দাম পেয়ে কৃষকরাও এখন স্বস্তিতে।

রংপুরের আলু চাষি কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নতুন আলুর দাম বেশি। তা সত্ত্বেও ক্রেতারা নতুন আলুর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। তাই দামও ভালো পাওয়া যাচ্ছে। আগাম আলু চাষ করে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। 

রংপুরে আগাম জাতের নতুন আলু তোলা শুরু হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই পাইকাররা ক্ষেত থেকে প্রকারভেদে কেজি প্রতি ৪৯ থেকে ৫২ টাকা দরে আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। চাহিদা ভালো হলেও কৃষকদের দাবি গতবারের তুলনায় এবার দাম কম, ফলে লাভের পরিমাণও খুব বেশি হবে না।

কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রংপুর জেলায় ৯ হাজার ২৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৪০০ হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। ১০৬০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৮০০ হেক্টর জমির আলু তোলা শেষ।

কৃষকরা জানান, গত বছর একই সময় পাইকারি বাজারে নতুন আলুর দাম ছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি। 

এবছর বীজের দাম কম হলেও আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাবে ফলন আশানুরূপ হয়নি। তাই আয়ের হিসাব তেমন সহায়ক হবে না। তবে আগাম আলুর চাহিদা ও বাজারে দামের স্থিতিশীলতা কৃষকদের কিছুটা আশাবাদী করেছে।

সরেজমিনে জেলার নোহালী ও আলমবিদতর ইউনিয়নের তুলশীর হাট, পূর্ব কচুয়া ও সর্দারপাড়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সকাল বেলার কুয়াশা ভেদ করে নারী শ্রমিকরা আলু তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাটি খুঁড়ছেন, কেউ আলু কুড়িয়ে ডালায় রাখছেন, কেউ বা বস্তায় ভরছেন।

পাশেই ডিজিটাল মিটার বসিয়ে ওজন মাপা হচ্ছে। আলু বস্তায় ভরার পরই ব্যবসায়ীরা কৃষকদের হাতে মূল্য পরিশোধ করছেন। আগাম আলু তোলার পর কেউ ভুট্টা, কেউবা তামাক রোপণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

আলমবিদতর ইউনিয়নের তুলশীরহাট এলাকার কৃষক মহব্বত আলী (৫৯) বাসসের সাথে আলাপকালে বলেন, ৫৫ শতক জমিতে আগাম আলু করেছিলাম। পাইকার এসে ৫০ টাকা কেজিতে কিনে নিয়েছে। দাম গতবারের চেয়ে কম। তবে বীজের দাম কম থাকায় মোটামুটি চলে যাবে।

নোহালী ইউনিয়নের পূর্ব কচুয়া এলাকার কৃষক তৈয়বুর রহমান (৪৫) বলেন, দুই বিঘায় ক্যারেজ জাতের আলু করেছি। ৫২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টিতে কিছু আলু নষ্ট হয়েছে। দামও কম, লাভ খুব একটা হবে না।

নতুন আলু ওঠার খবর ছড়িয়ে পড়তেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা রংপুরে আসতে শুরু করেছেন। তারা ক্ষেত থেকেই আলু সংগ্রহের পর ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকায় পাঠাচ্ছেন। কারো আলুর ক্রয়মূল্য ৪৮ টাকা, কারও আবার ৫৫ টাকা পর্যন্ত জাত ও মান ভেদে দর ওঠানামা করছে।

আলু ব্যবসায়ী শ্যামল চন্দ্র সরকার বলেন, ৫২ টাকা কেজিতে ক্যারেজ জাতের আলু কিনছি। মাঠ থেকেই বস্তা করে ট্রাকে লোড দিয়ে ঢাকা নিয়ে যাব। 

ব্যবসায়ী মজমুল বলেন, এ এলাকায় আগাম আলুর আবাদ বেশি। বর্তমানে নতুন আলুর চাহিদা ভালো। তাই এখানকার ক্ষেত থেকেই কিনছি।

গঙ্গাচড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হোসেন বলেন, উপজেলায় আগাম আলুর আবাদ হয়েছে ৬০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাজার দর স্থায়ী থাকলে কৃষকরা এবার কিছুটা হলেও ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন।

রংপুর কৃষি অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ বিভাগের পাঁচটি জেলা থেকে এখন পর্যন্ত আড়াই হাজার হেক্টর জমির আগাম আলু উত্তোলন করা হয়েছে। চাষিরা দামও ভালো পাচ্ছে। ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের পাইকাররা এসে জমি থেকে আলু কিনে নেওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের নানা ধরনের সহায়তা করা হচ্ছে।