শিরোনাম

রংপুর, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বিজয় দিবসের নানা আয়োজনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, পেশাজীবী সংগঠন এবং সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মীরা। বিজয় দিবসের নানা আয়োজন ও বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে এই অঙ্গীকার প্রতিফলিত হয়েছে।
আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। বিজয়ের ৫৪ বছর পেরিয়ে ৫৫ বছরে এ দেশ। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতা। বাঙালি জাতি পেয়েছে বিজয় দিবস। যথাযোগ্য মর্যাদা, গভীর শ্রদ্ধা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে রংপুরে মহান বিজয় দিবস উদ্যাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে রংপুর জেলা প্রশাসন দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি আয়োজন করেছে। কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে নগরজুড়ে উৎসবমুখর ও আবেগঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
বিজয় দিবসের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এ সময় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জাতীয় পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। পাশাপাশি রংপুর প্রেসক্লাব, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠন ও সাধারণ মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের মুহূর্তে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
আজ ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জলা প্রশাসনের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এতে অংশ নেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী, রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
দিনব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে রংপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অসামান্য অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
বিজয় দিবস উপলক্ষে রংপুর নগরীর সড়ক, সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাল-সবুজের পতাকা ও আলোকসজ্জায় সাজানো হয়েছে। পরিবার-পরিজন নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ বিভিন্ন আয়োজনে অংশ নেন। দিনব্যাপী এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশ গঠনে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা।
এছাড়া বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বক্তারা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, চেতনা ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলী বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই আমরা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাঁদের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা রাষ্ট্র ও সমাজের নৈতিক দায়িত্ব।’
রংপুর জেলা প্রশাসক এনামুল আহসান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি বৈষম্যহীন, উন্নত ও মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।
রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বলেন,‘বিজয় দিবস আমাদের শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা দেয়। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।’
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই স্বাধীনতা আমাদের অহংকার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো আমাদের দায়িত্ব। তিনি বলেন, সামনে নির্বাচন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে কাজ করা হচ্ছে।
পরে রংপুর স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ। কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ পুলিশ, আনসার ও ভিডিপি, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন ।