বাসস
  ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫:৪৯

ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর জন্মশতবর্ষ  উপলক্ষে সুনামগঞ্জে আলোচনা সভা

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) লাইব্রেরি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : বাসস

মুহাম্মদ আমিনুল হক

সুনামগঞ্জ, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ (বাসস): প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও ভাষাসৈনিক অধ্যাপক শাহেদ আলীর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে সুনামগঞ্জে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

সুনামগঞ্জ পৌর শহরে অবস্থিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির উদ্যোগে গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) রাত ৮টায় লাইব্রেরি মিলনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন, জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। 

লাইব্রেরির সহসভাপতি লেখক সুখেন্দু সেন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বক্তব্য দেন, লাইব্রেরির সহসভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ মহিবুল ইসলাম।

লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খলিল রহমানের সঞ্চালনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা-লেখক আবু সুফিয়ান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মো. চান মিয়া, কবি ও লেখক ইকবাল কাগজী, কবি ও লেখক কুমার সৌরভ, জেলা সুশাসনের জন্য নাগরিকের সভাপতি নুরুল হক আফিন্দী, লোকসংস্কৃতি গবেষক মোহাম্মদ সুবাস উদ্দিন, লাইব্রেরির কোষাধ্যক্ষ অ্যাডভোকেট মাহবুবুল হাছান শাহীন, সাংবাদিক-আইনজীবী মহসিন রেজা মানিক, রাজনীতিক-উন্নয়নকর্মী সালেহীন চৌধুরী।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, অধ্যাপক শাহেদ আলী ছিলেন, একজন সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ভাষাসৈনিক, ইসলামি চিন্তাবিদ, সংগঠক, সংস্কৃতিসেবী ও রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব। অধ্যাপক শাহেদ আলীর ‘জিবরাইলের ডানা’ বঞ্চিত মানুষের গল্প। তাঁর লেখায় দারিদ্র, শোষণ ও বঞ্চনার কথা তুলে ধরেছেন। আমাদের গ্রামীণ সমাজের বাস্তবতা ও বিত্তের ভয়াল চিত্র তার লেখায় উঠে এসেছে। সমাজকে জানতে হলে শাহেদ আলীকে জানতে হবে। নতুন প্রজন্মকে জানাতে তাঁকে নিয়ে আলোচনা ও চর্চার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বক্তারা আরও বলেন, তাঁর সাহিত্যকর্ম ছিল মহৎ, অসাধারণ। এর গুরুত্ব অসীম। কিন্তু তাঁর রাজনীতিকে অনেকেই সামনে নিয়ে আসেন। অধ্যাপক শাহেদ আলী বহু গুণে গুণান্বিত মানুষ। নতুন প্রজন্মের সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি এর শেকড়ের সন্ধান করতে হবে।

অধ্যাপক শাহেদ আলী একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ভাষা আন্দোলন পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন। তাঁর জন্ম ১৯২৫ সালের ২৬ মে তাহিরপুর উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামে। 

অধ্যাপক শাহেদ আলী সুনামগঞ্জ সরকারি জুবিলি উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৪৩ সালে প্রবেশিকা, সিলেট এমসি কলেজ থেকে ব্যাচেলর’স এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৫১ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। ঢাকার মিরপুর বাংলা কলেজ, রংপুর কারমাইকেল কলেজ ও চট্টগ্রাম সিটি কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। 

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনে তিনি সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৪ সালে 'খেলাফতে রব্বানী পার্টি' এর নমিনেশনে প্রাদেশিক আইনসভার সদস্য নির্বাচিত হন। অধ্যাপক শাহেদ আলী ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (সাবেক ইসলামিক একাডেমি) প্রতিষ্ঠাতা সচিব।

১৯৬২ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। চল্লিশের দশক থেকেই তিনি যুক্ত ছিলেন সাংবাদিকতার সঙ্গে। ১৯৪৪-৪৬ সালে 'মাসিক প্রভাতী' এবং ১৯৪৮-৫০ সালে 'সাপ্তাহিক সৈনিক' এর সম্পাদক ছিলেন। ১৯৫৫ সালে দৈনিক 'বুনিয়াদ' সম্পাদনা করেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের শিশু মাসিক সবুজ পাতার সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন ১৯৬৩ থেকে ১৯৮২ পর্যন্ত। ১৯৫৬ সালে 'দৈনিক মিল্লাত' এর সহকারি সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৩-৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পত্রিকার সম্পাদনা বোর্ডের সদস্য ছিলেন। এছাড়া ছিলেন ইসলামী বিশ্বকোষের সম্পাদনা বোর্ডেরও সদস্য।

অধ্যাপক শাহেদ আলী বিভিন্ন বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলনের সার্বিক কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। তিনি তমদ্দুন মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ও পরে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। ১৯৪০ সালে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে সওগাতে তার সর্বপ্রথম গল্প ‘অশ্রু’ প্রকাশিত হয়। তাঁর রচনাবলির মধ্যে রয়েছে গল্পগ্রন্থ - জিব্রাইলের ডানা, একই সমতলে, অতীত রাতের কাহিনি, অমর কাহিনি, নতুন জমিনদার। উপন্যাস- হৃদয় নদী ও নাটক 'বিচার' শাহেদ আলী। ছোট গল্পের জন্য ১৯৬৪ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার পেয়েছেন।

কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন ভাষা আন্দোলন পদক (১৯৮১), একুশে পদক (১৯৮৯), ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ পুরস্কার, কিশোর কণ্ঠ সাহিত্য পুরস্কার (মরণোত্তর), ফররুখ স্মৃতি পুরস্কার, জাসাস স্বর্ণপদক, তমদ্দুন মজলিস, মাতৃভাষা পদক এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পুরস্কার।
বরেণ্য এই কথাশিল্পী ২০০১ সালের ৬ নভেম্বর তিনি ইন্তেকাল করেন।