শিরোনাম

\ শফিকুল ইসলাম বেবু \
কুড়িগ্রাম, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : টানা কয়েকদিনের শীতে জমে গেছে হিমালয়ের পাদদেশীয় জেলা কুড়িগ্রাম। আজ বুধবার ভোরে তাপমাত্রা নেমেছে মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। শীতের তীব্রতায় স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেড়েছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে কষ্ট বেড়েছে চরাঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর।
জানা গেছে, সীমান্ত জেলা কুড়িগ্রামে শীতের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা ১২ থেকে ১৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে ওঠানামা করলেও আজ সকাল ৬টায় রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস—যা চলতি মৌসুমে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
জেলার বাসিন্দাদের অনেকে জানান, শীতের তীব্রতায় কুড়িগ্রামে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।
রাত থেকে সকাল পর্যন্ত উত্তরের শীতল বাতাসে বাড়ছে কাঁপুনি। দিনের বেলায় সূর্যের আলো থাকলেও মিলছে না সেই কাঙ্ক্ষিত উষ্ণতা। জেলার চরাঞ্চলগুলোতে শীতের তীব্রতা আরও বেশি। খোলা মাঠ আর নদীর ধার জুড়ে প্রায়ই কুয়াশা ছড়িয়ে থাকে এ অঞ্চলে। সেই কুয়াশা ভেদ করে শ্রমজীবী মানুষদের বের হতে হচ্ছে জীবিকার খোঁজে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা মাস্টারেরহাট এলাকার দিনমজুর মোহাম্মদ হোসেন জানান, শীতের কারণে সকালে কাজে যাইতে দেরি হয়। ঠান্ডায় হাত-পা চলতে চায় না, তবু কাজ না করলে তো পেট চলে না।
নাগেশ্বরীর নুনখাওয়া ইউনিয়নের জাহিদুল ইসলামের কষ্ট আরও গভীর। তিনি বলেন, এবার ঠান্ডা অনেক বেড়েছে। ছাওয়া-পোয়াসহ খুবই কষ্টে আছি। এখনো কেউ কম্বল দেয় নাই।
একই এলাকার খাইরুল ইসলাম বলেন, ঠান্ডায় কাজ করলে হাত-পা জ্বালা করে। শরীর জমে আসে। ঠিকমতো কাজ করতে পারি না।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, ভোরের দিকে ঠান্ডা এত বেশি থাকে যে শিশুদের স্কুলে পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ছে।
শুধু মানুষ নয়, শীতে কষ্ট বেড়েছে গৃহপালিত পশু-পাখিরও। খামারিরা বলছেন, রাতের দিকে ঠান্ডা বাতাসে পশুগুলো কাঁপে। শীতে এগুলো ঠিকমতো খাবার গ্রহণও করতে পারছে না।
এদিকে তীব্র শীতের কারণে কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালসহ জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বাড়ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ এবং শিশুরা বেশি কাবু হচ্ছে।
তবে কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপ্নন কুমার বিশ্বাস বলেন, জেলায় শীতজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা এখনও তেমন বাড়েনি। এরপরও বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিদিন যে রোগীরা আসছেন তারা আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
কুড়িগ্রাম জেলা চর উন্নয়ন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, কুড়িগ্রামের ২৪ লাখ মানুষের মধ্যে ১৭ লাখই দরিদ্র—এটাই আমাদের বাস্তবতা। তার ওপর জেলায় ১ লাখ ১ হাজার ৯৮৯ জন প্রতিবন্ধী মানুষ রয়েছেন। এই শীতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে শিশুরা, বৃদ্ধরা আর আমাদের অসহায় প্রতিবন্ধী ভাই-বোনেরা।
তাই জেলা প্রশাসন, সামাজিক সংগঠন আর সামর্থ্যবান সকল মানুষের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিতে অনুরোধ করছি।
দ্রুততম সময়ে শীতবস্ত্র পৌঁছে দিন তাদের হাতে। একটি কম্বল হয়তো বড় কিছু নয়, কিন্তু কারও জন্য সেটা হতে পারে আজকের রাতটা বেঁচে থাকার সুযোগ।
জেলা প্রশাসক অন্নপূর্ণা দেবনাথ জানান, শীতবস্ত্র বিতরণের তালিকা তৈরি হয়েছে। খুব দ্রুত জেলার শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ শুরু হবে।