শিরোনাম

\ রেজাউল করিম মানিক \
রংপুর, ৯ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : আজ ৯ ডিসেম্বর, রোকেয়া দিবস। ১৮৮০ সালের এই দিনে রংপুরের পায়রাবন্দে রোকেয়ার জন্ম। ১৯৩২ সালের একই দিনে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার মৃত্যু হয়।
ক্ষণজন্মা মহীয়সী এই নারীর জন্ম ও মৃত্যুদিন ঘিরে প্রতিবছর পালন করা হয় রোকেয়া দিবস।
দিবসটি উপলক্ষে আজ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও রংপুর জেলা প্রশাসন। পতাকা উত্তোলন, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে স্মরণ করা হচ্ছে এই মহীয়সী নারীকে।
রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ-নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের জন্মভিটা। তবে জন্মের একশত ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও উপমহাদেশের নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার পৈতৃক জমি ও স্মৃতি আজও ঝুঁকির মুখে। জন্মভূমি পায়রাবন্দে তার ৩৫০ বিঘা জমি বেদখল রয়েছে বলে জানা গেছে।
বেগম রোকেয়া তার জীবনকাল (১৯৩২ সাল পর্যন্ত) নারী শিক্ষার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। কঠোর সমাজ ও রক্ষণশীল পিতার অধীনে তিনি গোপনে শিক্ষা লাভ ও সাহিত্য চর্চা করেন। ১৯০২ সালে ‘নবপ্রভা’পত্রিকায় লেখা ‘পিপাসা’ প্রকাশের মাধ্যমে তিনি সাহিত্যিক খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে তার লেখা ‘সুলতানার স্বপ্ন’ প্রকাশিত হয়, যা নারী শিক্ষার পক্ষে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। অন্যান্য রচনা হিসেবে উল্লেখযোগ্য ‘পদ্মরাগ’,‘অবরোধবাসিনী’ ও ‘মতিচুর’।
বাংলার নারী জাগরণে বেগম রোকেয়ার ভ’মিকা অপরিসীম হলেও এ মহিয়সী নারীর দেহাবশেষ আজও রয়ে গেছে বিদেশে। তাই স্থানীয়দের দাবি দ্রুত তার দেহাবশেষ তার জন্মস্থানে আনা হোক।
পায়রাবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক হোসেন বলেন, রোকেয়ার জন্মভিটা এখন বেদখল ও ঝুঁকিতে। তার জমি উদ্ধার না হলে রোকেয়ার ইতিহাস হারিয়ে যাবে। তার দেহাবশেষও জন্মভূমিতে আনা দরকার। তার স্মৃতিকেন্দ্র সংস্কার করা জরুরি। রোকেয়ার স্মৃতিস্থান আজও অবহেলায় পড়ে আছে। এগুলো সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
স্থানীয়রা জানান, রোকেয়ার ঐতিহাসিক অবদান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হলে তার জন্মভিটাকে আধুনিক জাদুঘর ও গবেষণা কেন্দ্রে রূপান্তর করা প্রয়োজন।
বেগম রোকেয়া স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, বেগম রোকেয়ার স্মৃতিচিহ্নগুলো আজ ধ্বংসের মুখে। জমি বেদখল, বাড়ি জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। না হলে একদিন ইতিহাসটাই হারিয়ে যাবে।
এদিকে মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ বলেন, জমি উদ্ধারসহ রোকেয়ার স্মৃতিসংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকাত আলী বলেন, বেগম রোকেয়ার কারণেই সারাদেশের নারীরা পর্দার অন্তরাল থেকে বের হতে পেরেছে। শিগগির রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে রোকেয়াকে নিয়ে গবেষণাগার খোলা হবে। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়াকে গভীরভাবে স্মরণ করছেন।