শিরোনাম

ঢাকা, ২ ডিসেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিয়ে আজ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার। তিনি বলেন, এখন সেই সময়, যখন ঢাকা প্রমাণ করতে পারে যে— বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক পশ্চাৎ যাত্রার প্রবণতা উল্টে দেওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে।
আজ সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি আগামী বছরে অনুষ্ঠিতব্য ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, তিনি মনে করেন— দেশের সব অংশীজনের উচিত বহু বছর পর প্রথম অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনার দিকে খুব গুরুত্ব সহকারে মনযোগ দেওয়া।
তিনি বলেন, আমি যে বার্তাটি দিতে চাই তা হলো— এটি এই দেশের জন্য সেই মুহূর্ত, যখন দেশটি দেখাতে পারে যে, গণতন্ত্রের পশ্চাৎ যাত্রা রুখে দেওয়ার প্রবণতায় বাংলাদেশ ব্যতিক্রম।
তিনি আরো বলেন, এটি এমন একটি সময়, যখন দেশটি প্রচলিত ধারা বদলে দিতে পারে, আন্তর্জাতিক অংশীদারদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি নতুন করে তৈরি করতে পারে এবং দেখাতে পারে যে— নির্বাচনটি যথাযথ ও পেশাদারভাবে আয়োজন করতে সক্ষম।
নির্বাচনের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি খুবই আশাবাদী।
তিনি আরো বলেন, আমরা দেখছি নির্বাচন কমিশন সম্ভাব্য সব ধরনের জটিলতা আগে থেকেই বিবেচনায় নিচ্ছে এবং সেসব ঝুঁকি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, এই কাজ চলমান... অবশ্য আমরা এখনো নির্বাচনের তফসিল পাইনি। তবে সেই ঘোষণার অপেক্ষায় আছি। এরপর আমরা দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজনে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সময়মতো, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে সমর্থন করে। এ ধরনের নির্বাচন বাংলাদেশের জন্য তার গণতান্ত্রিক যাত্রাপথে নতুনভাবে গল্প বলার এক বড় সুযোগ।
রাষ্ট্রদূত বলেন, গত সপ্তাহান্তে আমি নির্বাচন কমিশনের প্রধানের সঙ্গে একটি মক মহড়ায় যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেখানে নিশ্চিত করা হচ্ছিল যে— কমিশন এমন নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত, যে নির্বাচনে শুধু পপুলার ভোটই নয়, বরং জুলাই সনদ নিয়ে গণভোটও একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। একই দিনে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের লজিস্টিক চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে নির্বাচন কমিশনের অগ্রিম প্রস্তুতি ও সুদূরপ্রসারী বিবেচনা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
তিনি আরো বলেন, ইইউ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অঙ্গীকার এবং পেশাদারিত্বকে স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের যথাযথভাবে প্রস্তুত নির্বাচন পরিচালনার সক্ষমতার প্রতি আস্থা রাখে।
তিনি জানান, ২০২৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক আয়োজন হতে যাচ্ছে বাংলাদেশে, আর তা পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি বৃহত্তর নির্বাচন পর্যবেক্ষক দল পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তিনি বলেন, এটি নির্বাচন প্রক্রিয়ার প্রতি আমাদের আস্থা এবং এই বৈচিত্র্যময় দেশের নির্বাচনি প্রচেষ্টার প্রতি আমাদের সমর্থনেরই প্রতীক।
স্বাধীন ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন একটি প্রজন্ম আছে, যারা পূর্বের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অর্থাৎ আপনারা এমন একটি সম্পূর্ণ প্রজন্ম, বা আরো বেশি মানুষ পেয়েছেন, যারা কখনো ভোট দেয়নি। এটি একটি চ্যালেঞ্জ হবে। কারণ, মানুষকে জানতে হবে নির্বাচনের দিন বা গণভোটের দিন কীভাবে ভোট প্রদান করতে হয়, কী করতে হয়।
আজ সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে ইইউ রাষ্ট্রদূতের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দপ্তরে সাক্ষাৎ করতে যায়।
দলে ছিলেন— ডেপুটি হেড অব ডেলিগেশন বাইবা জরিনা, রাজনৈতিক বিষয়ে ফার্স্ট সেক্রেটারী সেবাস্তিয়ান রিগার-ব্রাউন এবং ইউরোপীয় কমিশনের নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জুলেস সাইটজ।