বাসস
  ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৮
আপডেট : ২৪ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৪

ই-পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে: আইন উপদেষ্টা

সোমবার রাজধানীর মহানগর দায়রা জজ আদালতের জগন্নাথ-সোহেল মিলনায়তনে ই-পারিবারিক আদালতের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে কথা বলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি: বাসস

ঢাকা, ২৪ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস): বিচার ব্যবস্থাসহ সব ক্ষেত্রেই ডিজিটাইজেশনের দিকে এগোনোর সময় এসেছে উল্লেখ করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, দেশে ই-পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে নিঃসন্দেহে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে, সময়ও বাঁচবে। কারণ ই-পারিবারিক আদালত চালুর ফলে বিচারপ্রার্থীকে আর আগের মতো ঘুরতে হবে না।

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ভবনে জগন্নাথ-সোহেল স্মৃতি মিলনায়তনে ই-পারিবারিক আদালত কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আজ ড. আসিফ নজরুল এসব কথা বলেন। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় এই ই-পারিবারিক আদালত তৈরিতে সহযোগিতা করে।

বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের উদাহরণ দিয়ে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, আইন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ২১টি রিফর্মের কাজ করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, এসব সংস্কার টিকবে না, যদি না আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই এতে যুক্ত না হন এবং ধারাবাহিকতা বজায় না থাকে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, ই-জুডিসিয়ারি ও ই-রেজিস্ট্রেশন প্রকল্প আমরা শুরু করে দিয়ে যাবো। আমরা আশা করবো আমাদের যে রাজনৈতিক দলগুলো আছেন, ওনারা নিশ্চয়ই আমাদের চেয়ে দেশকে বেশি ভালোবাসেন। সেটা তারা প্রমাণ করবেন।

বাংলাদেশে সংস্কার নিয়ে কয়েক ধরনের বিভ্রান্তি কাজ করে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে আগে পারিবারিক আদালতে যেতে হতো। এখন পারিবারিক বিরোধের ক্ষেত্রে প্রথমে অবশ্যই লিগ্যাল এইড অফিসে যেতে হবে। সেখানে সন্তুষ্ট না হলেই কেবল পারিবারিক আদালতে যাওয়া যাবে। এতে ভোগান্তি ও দুর্নীতি কমবে, সময়ও বাঁচবে।

তিনি বলেন, আইন সংস্কারের মাধ্যমে এখন লিগ্যাল এইড অফিসে একজন বিচারকের স্থলে তিনজন বিচারক নিয়োগের বিধান করা হয়েছে। এতবড় পরিবর্তনের অবশ্যই একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে যদি আমরা সবাই এই চর্চাটা শুরু করি। তিনি জানান, এখন ২০ জেলায় এই কার্যক্রম চালু করেছি, আমাদের স্বপ্ন আছে, যাওয়ার আগে ৬৪ জেলায় চালু করব। আমাদের একটি হিসাব আছে, যখন এই কার্যক্রম সারাদেশে সম্পূর্ণভাবে চালু হবে, তখন বাংলাদেশের মোট মামলার ১/৪ অংশ এমনকি ১/৩ অংশ লিগ্যাল এইড অফিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। আশা করি, এর ফলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মামলার জট অন্তত ৫০ শতাংশ কমে যাবে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমার জানামতে, বাংলাদেশে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বড় সংস্কার হলো ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) চালু করা। প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ‘ভ্যাট কী সংবিধান পরিবর্তন করে চালু করা হয়েছিল? না, এটা আইনের মাধ্যমে চালু করা হয়েছিল।’ বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণের অনেক বড়-বড় নীতি পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক আইন প্রণয়ন/সংস্কারের মাধ্যমে হয়েছিল। বাংলাদেশে এসিড সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণও আইনের মাধ্যমে হয়েছিল। এরকম অনেক বড়-বড় সংস্কার/পরিবর্তন আইনের মাধ্যমে হয়েছিল।

সিঙ্গাপুরের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরকে সংস্কার করতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউর ১০ বছর সময় লেগেছে। কাজেই সংস্কার রাতারাতি করা সম্ভব না।

মালদ্বীপ ও তিউনিসিয়ার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত সংস্কার করতে গিয়ে যেন রাষ্ট্র কাঠামো দুর্বল না হয়, সেটাও চিন্তা করতে হবে। তাই সংস্কার অবশ্যই বাস্তব চিন্তার আলোকে করতে হবে। সংস্কার গ্রহণ করার জন্য দেশের মানুষকেও প্রস্তুত করতে হবে। নতুন সরকার আসলেও যেন আমাদের উদ্যোগগুলো চলমান থাকে, সেই আকাঙ্ক্ষা থাকবে। না হলে উদ্যোগগুলো ম্লান হয়ে যাবে।

সংশয় দূর করতে উপদেষ্টা বলেন, অনেকে মনে করেন প্রযুক্তি এলে মামলা কমে যাবে। আসলে বিষয়টি এমন নয়। প্রযুক্তির মাধ্যমে আইনজীবীরাও আরো বেশি সেবা দিতে পারবেন।

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নতুন এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পেপারলেস সিস্টেম আরো এগিয়ে যাবে। এটি আমার জন্য আনন্দের বিষয়। প্রক্রিয়াটি গ্রহণ করায় আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানান তিনি।

ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, এই ডিজিটাল কার্যক্রম আইনজীবীদের আরো দ্রুত ও কার্যকর সেবা দিতে সহায়তা করবে।

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন- আইন ও বিচার বিভাগের সচিব লিয়াকত আলী মোল্লা, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীসহ অন্যরা।

ই-পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে মামলার দীর্ঘসূত্রতা, অতিরিক্ত খরচ, দূরত্বজনিত সমস্যা, কাগজের নথি ব্যবস্থাপনা, সময়ক্ষেপণ এবং ভিড় ও অপেক্ষার মতো আগের সমস্যাগুলোর সমাধান হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া দ্রুত অনলাইন প্রক্রিয়া, ন্যূনতম খরচ, ঘরে বসে সেবা গ্রহণ, ডিজিটাল নথি, সপ্তাহের সাত দিন ২৪ ঘণ্টা রেজিস্ট্রেশন এবং অনলাইন শিডিউলিংয়ের সুবিধা পাওয়া যাবে।